প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটি তার ইচ্ছাতেই বর্ধিত করা হয়েছে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আইন মন্ত্রণালয় ও আইএফসির সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।এ সময় আনিসুল হক বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিলের রায়ের কপি পাওয়া গেছে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) পিটিশন দাখিল করা হবে।তিনি আরও বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি বেশ বড় এ সময়ের মধ্যে দাখিল করা গেলে তার কারণ উল্লেখ করে পিটিশন দাখিল করা হবে।

প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, তাদের ইতিহাস সবার জানা আছে দলটির জন্ম হয়েছে সামরিক শাসনের মধ্যে। দলটির চেয়ারপারসন আইনের শাসনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল তা সবাই দেখেছে।উল্লেখ, গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।ছুটি নেওয়া, তা বাড়ানো এবং বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার চাওয়া অনুযায়ী সরকারের প্রজ্ঞাপন হয়েছে জানিয়ে এ নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায়ের পর ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে থাকা বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর এই আহ্বান জানান মন্ত্রী।হোটেল সোনারগাঁওয়ে লেজিসলেটিভ ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আনিসুল হক সাংবাদিকদেও প্রশ্নে বলেন, বিচারপতির সিনহার ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত কিছু বলা হয়নি, প্রধান বিচারপতি যা চেয়েছেন তাই প্রজ্ঞাপনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এসব নিয়ে আন্দোলন করা চেষ্টা করবেন না, এগুলো আন্দোলনের কোনো খোরাক না এবং এ ব্যাপারে কোনো আন্দোলন হবে না।বিএনপি বলে আসছে, প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করার পর এখন চাপ দিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।বিচারপতি সিনহার গত ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রী জানানোর পর বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়ানোর কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির আবেদনে এর আগে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বিচারপতি সিনহা যেহেতু আরও বেশি দিন বিদেশে থাকবেন, সেহেতু রাষ্ট্রপতি নতুন আদেশ দিয়েছেন।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়ানো বা অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করা হয়েছে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন আইনমন্ত্রীর কাছে। উত্তরে আনিসুল বলেন, এটাকে বলতে হবে যে উনি যেটা চেয়েছেন চিঠিতে, যেটা আছে, সেটাই কিন্তু আমাদের সামারি বলেন , প্রজ্ঞাপন বলেন, সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চিঠিতে উনার ব্যক্তিগত সহকারী যেটা লিখেছেন সেটা হচ্ছে উনি বিদেশ যেতে চান।প্রধান বিচারপতি চারটি দেশে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এবং ইউনাইটেড কিংডম এই চারটি দেশে যেতে চান। আগামীকাল ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগ করতে চান এবং ১০ নভেম্বর দেশে ফিরে আসবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।আগে ছুটি নিয়েছিলেন ১ নভেম্বর পর্যন্ত, সেই ছুটিটা এক্সটেন্ড করে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত করেছেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হয়, সেই নিয়োগের কারণে অবহিত করেছেন, বলেন আইনমন্ত্রী।

বিএনপি অভিযোগের বিষয়ে আনিসুল বলেন, প্রধান বিচারপতি চিঠি লিখে ছুটি নিয়েছেন তার অসুস্থতার কারণ বলে, এটিকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। আমি মনে করি কোনো পয়েন্ট তো তারা আন্দোলন করার পায় না, তারা চেষ্টা করে খড়কুটো ধরে আন্দোলনটা যদি করা যায়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউয়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি শুনেছি, গতকাল বা গত পরশু এই রায়ের কপি পেয়েছি। এটি ৭৯৯ পাতার জাজমেন্ট এবং প্রতিটি লাইন অত্যন্ত ইম্পর্টেন্ট, আমরা চেষ্টা করব ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার।এর আগে অনুষ্ঠানে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) মধ্যে লেজিসলেটিভ ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সচিব শাহেদ আহমেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) অ্যাক্টিং কান্ট্রি ম্যানেজার এহসানুল আজিম এক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা এবং ফলাফল নিরেূপণের নামই হচ্ছে লেজিসলেটিভ ইম্পেক্ট অ্যাসেসমেন্ট বা রেগুলেটরি ইম্পেক্ট এনালাইসিস।