মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিপীড়ন চলছেÑ জীবন বাঁচাতে আশ্রয় প্রার্থী অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্তের শূন্য রেখায় জড়ো হয়েছে।স্থানীয়দের মতে গত ৩ দিনের ব্যবধানে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালির আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে ২০ হাজারেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিক।অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আগের মত কঠোর সতর্কতামূলক অবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ -বিজিবির সদস্যরা।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে দেশ ছাড়তে শুরু করে মুসলমান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের দেয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ৫ লাখ ৮২ হাজারÑতবে এ সংখ্যা ছয় লাখেরও বেশি।আশ্রয়ের আশায় সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা।এসব রোহিঙ্গা জানান তাদের ওপর বর্বর নির্যাতনের কাহিনী।রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হলে মিয়ানমার থেকে আসা সকল রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হবে ভাসানচরে এমনটিই জানান ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণের জন্যই নির্দিষ্টভাবে তাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সমন্বিত অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।বুধবার এ মানবাধিকার সংগঠনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর এই অভিযানে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও-পোড়াও চলছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের জানিয়েছে।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, পরিকল্পিত এই অভিযানের মধ্যম দিয়ে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের পুরো রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরতা চালাচ্ছে মিয়ানমারের বাহিনী। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করাই তাদের উদ্দেশ্য।মিয়ানমার বাহিনীর এই নির্মমতা দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে গত কয়েক দশকের মধ্যে সৃষ্ট শরণার্থী সঙ্কটকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন তিরানা হাসান।সুবিচার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পথে এই বর্বরতার মুখোশ উন্মোচনই হল প্রথম ধাপ। যারা এর জন্য দায়ী, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী লোক দেখানো অভ্যন্তরীণ তদন্তের কথা বলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব গুরুতর ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারবে না।মিয়ানমারের বাহিনীর এই অভিযান অবিলম্বে বন্ধে সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের প্রতি আহ্বান জানান অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক।অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের কাছে পাওয়া বক্তব্যের সঙ্গে রাখাইনের স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে দেখেছে তারা। সমন্বিত ওই অভিযানে যে মাত্রায় বর্বরতা চালানো হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১২০ জন রোহিঙ্গা, ৩০ জন চিকিৎসা পেশাজীবী, ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার মত অপরাধের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে খাবার ও জরুরি সহায়তাও পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না।অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে সাতজন রোহিঙ্গা নারীর বক্তব্য এসেছে, যারা সেনা সদস্যদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিধি অনুযায়ী, এর সবই মানবতাবিরোধী অপরাধ বলছে অ্যামনেস্টি।সেনাবাহিনীর ওই অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, অভিযান শুরুর পর এক মাসেই অন্তত ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ তারা পেয়েছে।