বাংলাদেশকে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি পুলিশ ভেরিফিকেশনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে আগে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলেও এখন রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় সবগুলো বিভাগকেই ঝুঁকি হিসাবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। আর নব্বই দশক থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০০০ সালের পর তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে দালালদের সহযোগিতায় খুব সহজে পাসপোর্ট পেয়ে যায় রোহিঙ্গারা। বর্তমানে সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আদিল চৌধুরী বলেন, ‘আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পার্সপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে আছেন। আর ওখানে তাদের সকল অপকর্ম বাংলাদেশের উপর আসছে।’

চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ায় বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। আগে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেই রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি পুলিশ ভেরিফিকেশনে কঠোর হওয়ার জন্য প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজাওয়ান বলেন, ‘উপজেলার পরিষদ ও এলাকার এমপি এই গুলো জিজ্ঞাস করলে। এছাড়াও তাদের উচ্চারণ আমাদের মতো না। এভাবে আমরা তাদেরকে শনাক্ত করছি।’

অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এবং উখিয়ার কিছু জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয়তার সনদ দিয়ে আসছে। তাই এখন থেকে গণহারে জন্ম নিবন্ধন না দিতে ইউপি সদস্য এবং চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কক্সবাজারে উখিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন,’কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশি জাতীয়তা ও জন্মনিবন্ধন না নিতে না পারে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।’  একই অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও। তাই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনে জায়গা সংক্রান্ত নথি-পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কক্সবাজারে উখিয়া থানার (তদন্ত) পরিদর্শক মোহাম্মদ কায় কিসলু জানায়, পুলিশ ভ্যারিফিকেশনে যে পরিচয়পত্র দেওয়া হয় তা নির্বাচন কমিশনে মাধ্যমে যাচাই বাঁচাই করা হয়। রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ব্যাপারে পুলিশ সর্তক রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এ ধরণের সাতজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।