দুর্নীতি দমনের নামে দলের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধীদের কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পাল্টা কৌশল হিসাবে জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে তারা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রাক্তন রাজনৈতিক হেভিওয়েট। কিন্তু সেই চেষ্টা জিনপিং ব্যর্থ করে দেন। বর্তমানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম পার্টি কংগ্রেস চলছে। তার ফাঁকেই এই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছেন চীনের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান লিউ শিউ। তিনি জানান, বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানের ছক ব্যর্থ করে জিনপিং দলকে বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আরও পাঁচ বছরের জন্য দ্বিতীয় দফায় দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে চলেছেন জিনপিং।

হংকংয়ের ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’’ দাবি করেছে, পার্টি কংগ্রেসের ফাঁকে একটি বৈঠকে শিউ এই তথ্য পেশ করেন। তিনি জানান, দুর্নীতিগ্রস্ত কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বুঝতে পেরেছিলেন বিপদ আসন্ন। জিনপিং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছেন।

তাই ক্ষমতা দখলের জন্য তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তাদের মধ্যে চংকিং মেগাসিটির প্রাক্তন সম্পাদক সান ঝেংকাইও রয়েছেন। যিনি একসময় দলের সর্বোচ্চ কমিটি, পলিট ব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সদস্য হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। সান ও তার স্ত্রীকে জিনপিং সরিয়ে দেন। গত জুলাইয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়।
সান ঝেংকাইয়ের ঘটনা এমন আরও কয়েকজনের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। যেমন তার পূর্বসূরি বো শিলাই। কয়েক বছর আগে পার্টি কংগ্রেস শুরু হওয়ার সময় নাটকীয়ভাবে তাকেও সরতে হয়। সেই সময় তিনি ছিলেন জিনপিংয়ের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী। বর্তমানে তার জায়গা হয়েছে কারাগারে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত।

বেজিং জুড়ে জল্পনা, জিনপিংয়ের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের খাঁড়া নেমে এসেছে বেশ কয়েকজন বিরোধীর উপর। তাদের মধ্যে বো তো আছেনই। রয়েছেন নিরাপত্তা বিভাগের প্রাক্তন হর্তাকর্তা ঝাউ ইয়ংকাং-সহ আরও কয়েকজন জেনারেল, যেমন লিং জিহুয়া, সু কাইহাউ, গুয়ো বক্সিং। অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা খাটছেন ঝাউ।

নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক কমিশনের কর্তা শিউ জানিয়েছেন, প্রত্যেকেই ছিলেন উঁচু মাপের রাজনীতিবীদ, দলেও প্রভাব ছিল অনেকটাই। কিন্তু তারা ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় নেতৃত্বকে সরিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এদের প্রত্যেককেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিপদের আশঙ্কা থাকায় জিনপিংকে সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিনপিংয়ের সাফল্য সরকারি দক্ষতা ও দলের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন চীনের পদস্থ কর্মকর্তারা।