নির্বাচনে প্রার্থীর দেওয়া হলফনামা বিধান বাতিলের প্রস্তাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সংগঠনটি সব প্রার্থীর হলফনামা যাচাই-বাছাই ও হলফনামায় আরও কিছু বিষয় যুক্ত করার দাবি জানায়। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আজ রোববার সকালে সুজন হলফনামা বিধান বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের সহসভাপতি কাজী এবাদুল হক এবং সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক।

হাইকোর্ট ২০০৫ সালে এক রায়ে নির্বাচন কমিশনকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরনের তথ্য হলফনামা আকারে সংগ্রহ এবং তা জনগণের জন্য প্রকাশের নির্দেশ দেন। গত ৮ অক্টোবর সংলাপে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বিধানটি বাতিলের প্রস্তাব করে।সুজনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এটি বাতিলের ক্ষমতা কারও নেই। নির্বাচন কমিশনেরও না। এই প্রস্তাব মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এখানে আরও বলা হয়, বর্তমানে যে হলফনামা ব্যবহার করা হয়, তা অসম্পূর্ণ এবং ভোটারদের ক্ষমতায়িত করতে হলে আরও কিছু বিষয় যোগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

হলফনামায় বিধানকে আরও কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারে সুজন কিছু সুপারিশ করেÑপ্রার্থীর বয়স, বিদেশে নাগরিকত্ব আছে কি না, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ, প্রার্থীদের ওপর কারা নির্ভরশীল, তার বিস্তারিত বিবরণ এবং সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কি না, তা ক্ষতিয়ে দেখা।সুজনের সুপারিশে আরও আছে, বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধান সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি, হলফনামা যাচাই-বাছাই, তথ্য গোপনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা আছে কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশনের তা নেই। আমাদের নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী। তিনি আরও বলেন, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে কমিশন যাচাই-বাছাই ও বিধি প্রণয়নে আরও কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এটা অপরিহার্য।নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা বাতিলের দাবি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। একই সঙ্গে ভোটারদের বাক স্বাধীনতা হরণ মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও গণতন্ত্রের জন্য তা অশনিসংকেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।সুজন সম্পাদক বলেন, গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে একটি রাজনৈতিক দল ‘হলফনামা’র মত গুরুত্বপূর্ণ বিধান বাতিলের দাবি করেছে। এমন দাবি হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। হলফনামা বাতিলের ক্ষমতা ইসির নেই, এটি উচ্চ আদালতের এখতিয়ার।

হলফনামা বাতিল হলে নির্বাচনে অনিয়ম বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি বাতিল হলে নির্বাচনে বসন্তের কোকিল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের সংখ্যা বাড়বে। স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনকে নিজের কাজে লাগাবে। হলফনামায় বাতিলের প্রস্তাব নাকচ করে কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করার আহ্বান জানান সুজন সম্পাদক।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষমুক্ত রাখতে হলফনামার বিধান আরও কিভাবে কার্যকর করার জন্য ইসির কঠোর হওয়া উচিত। বর্তমান হলফনামার ছকটি অসম্পূর্ণ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে আরও কয়েকটি বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা উচিত। প্রার্থীর বয়স, বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কি-না, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কি-না ও প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের বিস্তারিত বিবরণ ইত্যাদি বিধি প্রণয়ন করে অর্ন্তভুক্তের দাবি জানান তিনি। কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, হলফনামা দেওয়ার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, মিথ্যা তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ও নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে হলফনামা যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিতে হবে।