মাত্র ২ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৩২ চিকিৎসকের পদ থাকলেও ২২ টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শুন্য রয়েছে। এ হাসপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও একজনও এখানে কর্মরত নেই। কাগজে কলমে ১০ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও এর মধ্যে ৪ জন গত প্রায় ৫ বছর যাবত কর্মস্থলে অনুমোদন বিহীন ভাবে অনুপস্থিত আছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করায় কার্যত ৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন এখানে। এর মধ্যে দু’জন ট্রেনিং রয়েছেন। ফলে ২ জন চিকিৎসক দিয়ে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ভরসা করতে হচ্ছে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের উপর। চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার উপর হাসপাতালের আশপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দালালরা অবাধে হাসপাতালে বিচরণ করে রোগি ভাগিয়ে নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগিরা জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে তাদেরকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগিদের দূর দূরান্তে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের যে অ্যাম্বুলেন্সটি আছে তা লক্কর ঝক্কর হওয়ায় রোগি নিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এ সময় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের উপর ভরসা করতে হয়, যা ব্যয় বহুল। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এক্স-রে, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম চালু রয়েছে। আলট্রাসনোগ্রামের চিকিৎসক নেই। সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার কক্ষে রোগিদের প্রচন্ড ভীড়। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে তিনি একা হিমসীম খাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সবিজুর রহমান আরো জানান, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট আর্থোসার্জারী, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম পদে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ হাসপাতালে কর্মরত নেই। এছাড়া ডেন্টাল সার্জন, সহকারী সার্জন অ্যানেসথেসিষ্ট ও সহকারী সার্জন (আই এম ও) পদ ও ফাঁকা রয়েছে। ১১টি ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১ জন সহকারী সার্জন থাকার কথা থাকলেও সেগুলোও ফাঁকা।
তিনি আরো জানান আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী ও ইমার্জেন্সী বিভাগের রোগীও দেখতে হয়। প্রতিদিন রোগি ভর্তির সংখ্যা বিপুল বলে জানা জানান তারা। সব মিলিয়ে যে কয়েকজন চিকিৎসক এখানে কর্মরত আছেন তারা চাপের মধ্যে থেকেও সব সময় সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি বললেন, প্রতি মাসেই চিকিৎসক সংকটের কথা প্রতিবেদনে বলা হয়। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। ৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ২ জন ট্রেনিংয়ে আছে। আরএমও সহ ২ জন ডে নাইট সেবা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তাকেও সার্বক্ষনিক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। শুধু চাটমোহরই নয় পাশের বড়াইগ্রাম,ভাঙ্গুড়া ও আটঘরিয়া উপজেলার রোগিকেও সেবা দিতে হচ্ছে এই হাসপাতালে।
এ ব্যাপারে পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ তাহাজ্জেল হোসেন জানান, পুরো পাবনায় ৫২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। এর মধ্যে ডেপুটেশনে আছে ৫ জন। ৪ জন চিকিৎসক অনুনমোদিত ভাবে অনপুস্থিত প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রতি মাসে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করছি।