রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি বাপেক্স ভোলার শাহবাজপুরের পাশে নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে।সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ খবর জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ ভালো সুসংবদ।নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবহিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ওই বৈঠকের পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন শফিউল আলম।

তিনি বলেন, ৭০০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস হয়ত আছে। আগে ওখানে যে কূপ আছে সেটা মিলে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান ওখানে আছে বলে আমরা ধারণা পেয়েছি।বাপেক্সের ব্যবস্থাপনাপরিচালক নওশাদ ইসলাম জানান, নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান শাহবাজপুরের বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগবি ইউনিয়নে।অনুসন্ধানে গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল। তবে যাচাই-বাছাই করে আজ আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় গ্যাস ক্ষেত্র। সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় ক্ষেত্র আর পাওয়া যায়নি। আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব।

ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ মে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। সেখানে থাকা চারটি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে বলে বাপেক্স ওয়েবসাইটের তথ্য।শাহবাজাপুরে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে বাপেক্সের প্রকৌশলীদের ধারণা। রাষ্ট্রায়ত্ব তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রমানিত গ্যাসের মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সারা দেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। স্থল, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান চালাচ্ছে।পাশাপাশি বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে একাধিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহককে গ্যাস দিতে হয়।উৎপাদিত গ্যাসের ৪২ শতাংশ যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে; ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আর ১৭ শতাংশ গ্যাস শিল্প কারখানায়, ১১ শতাংশ আবাসিক সংযোগে, ৭ শতাংশ সার কারখানায় এবং ৬ শতাংশ গ্যাস যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদিকে, শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব।এ লক্ষ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমার গিয়েছেন।সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের শরণার্থী প্রত্যাহার আইনের চুক্তির আলোকে কূটনৈতিক কাগজপত্র আদান-প্রদান চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চূড়ান্ত হলে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, উগ্র আচরণ করলেও আমরা তা করবো না। ধৈর্য সহকারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কেউ উগ্র আচরণ করলেও বাংলাদেশ ঠান্ডা মাথায় কাজ করবে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়েই যে কোনও জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।