দিনমজুর আব্দুল কাদের। দিনে আনে দিনে খায়। কাজ না থাকলে সে খাবারও উপায় নাই। সংসার চলে খুবই অভাব অনাটনের মধ্যে। এরি মাঝে শরীরে বাসা বেধেছে মরণব্যথী এক অজানা রোগ। সারা শরীর যেন মারবেলের মতো ফুলে গুটিগুটি হয়ে আছে দীর্ঘ ৩২টি বছর ধরে।

এ রোগের কারণে সমাজ ও স্বজনদের থেকে বিছিন্ন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ছোঁয়াচে রোগ ভেবে অনেকেই তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না। এমনকি আত্মীয়তাও করতে চায় না কেউ। আর এ রোগের কারনে কেউ তাকে কাজে নিতে চায়না। ফলে পরিবার নিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি জেনেটিক। এটি বংশগত রোগ এবং এর নাম নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস (Neurofibromatosi)। কারও শরীরে একবার শুরু হলে তার পরিধি দিনদিন বাড়তেই থাকে।

৭ জনের পরিবার। দুটি মেয়ের বিয়ে দিলেও এখনো ঘরে আছে দুটি মেয়ে। একটি পড়ে ৯ম শ্রেণীতে আর একটি ৬ষ্ঠ শ্রেণী। ছাত্রী হিসাবেও তারা মেধাবী। একমাত্র ছেলে তার শরীরে দেখা দিয়েছে এ রোগ। ছেলের শরীরের নতুন করে এই রোগের লক্ষণ দেখে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন আব্দুল কাদের। এছাড়াও রয়েছে নানান লোকের নানান কথায়।

কেউ বলেন এটা মরণব্যথী, কেউ বলেন এটা ছোয়াছে রোগ, কেউ বলেন এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় নাই। কেউ বলে এটা বংশীয় রোগ, কেউ বলে এই রোগ যাকে একবার ধরেছে তার বাচার উপায় নাই। এখন কি হবে তাদের?

বর্তমানে সারা শরীরে ভরে গেছে এই রোগে। চলাচল করতে অনেক কষ্ট। আগে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন। এখন সেটাও পারেন না। বিভিন্ন সময় চিকিৎসা করলেও তিনি সুস্থ হননি।

চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে বাঁচতে চান দিনমজুর আব্দুল কাদের ও তার ছেলে। চিকিৎসা করার জন্য দেশবাসীর কাছে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা চান তার পরিবার।

উত্তরের সীমান্ত ঘেসা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোঁতামারী ইউনিয়নের ভুটিয়া মঙ্গল এলাকার পুর্ব পাড়া গ্রামের মৃত্যু তাহের উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের (৫৫)।

সরেজমিন :
আব্দুল কাদের বলেন, এতটা ব্যাথা নিয়ে বাস করা আমার জন্য খুব কঠিন। শরীর এবং ঘাড়ের ওপর চুলকানির সঙ্গে অনেক ভোগান্তি তো রয়েছেই। তার ওপর আমার শরীর ভারি অনুভব করি। যে কেউ আমাকে দেখে দূরে সরতে চেষ্টা করে। বাচ্চারা যখন আমাকে দেখে তারা শুধু ভূত বা দৈত্য বলে দৌড়ে পালায়। এই কারণে আমি খুব বেশি বাইরে বের হই না, শিশুরা আমাকে দেখলে ভয় পায়।’

তিনি আরো বলেন, এক সময় আমার এ অবস্থা ছিল না, আমি আমার তরুণ বয়সে সুদর্শন ছিলাম। আমি আমার ছেলে বা পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছি না। আমি খুব খারাপ বোধ করি, রাতে আমি চিন্তায় ঘুমাতে পারি না।

জমাজমি বলতে তার আছে দেড় বিঘা জমি। তাও আবার নদীর বুকে হাড়িয়ে গেছে। তাদের সংসার চলে অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে। তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন। এর মাঝেও দুটি মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। সরকারী সাহায্য সহযোগীতা বলতে তারা কিছুই পাননি। ইউপি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পরাজয় হওয়ায়, নির্বাচিত মেম্বার চেয়ারম্যান তাদের কিছুই দেননা।
আব্দুল কাদেরের পরিবারের দুঃখের যেন সীমা নাই। তার মাঝেও দুটি মেয়ের বিয়ের খরচ কিভাবে যোগাবেন তারও কোন পথ নেই।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম বলেন, এটি একটি জেনেটিক ডিজঅর্ডার যা স্নায়ুতন্ত্রের কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এর কারণে স্নায়ু বা নার্ভ টিস্যুতে টিউমার সৃষ্টি হয়। এই টিউমার স্নায়ু তন্ত্রের যে কোন অংশ যেমন- মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, নার্ভে দেখা দিতে পারে। এ রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। পেলিয়াটিভ থেরাপির মাধ্যমে কিছুটা চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। তবে এর মাধ্যমে রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

এই অসহায় পরিবারটিকে কেউ আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করুণ!
ফোন- ০১৭২৩৩৪৭২২৭। ডাচ বাংলা।