সাবেক সচিব ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের ৮৪ বছরের জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। জীবনের শেষ দিনগুলো ছাড়া যখন যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নিজের মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তার নাম প্রথম সাধারণ মানুষ জানতে পারে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর। তখন তিনি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সে সময়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য যে কালো তালিকা করেছিল তাতে কিছু ব্যবসায়ী ও আমলার সঙ্গে তার নামও ছিল।

এ কারণে ৯১’র নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চেয়েও মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন এবং এমপি নির্বাচিত হন। তিনি মোট পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় ছিলেন দুইবার। সর্বশেষ তিনি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এম কে আনোয়ার১৯৭১ সালে ঢাকার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার ১৯৯১ সালে অবসরের পর জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও ছাত্র জীবনেও তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এম কে আনোয়ারের জন্ম ১৯৩৩ সালে কুমিল্লার দেবীদ্বারে। ১৯৪৮ সালে মেট্রিক এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এস.সি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন।ঢাকা কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদের ভিপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছিলেন এম কে আনোয়ার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। পরের ৩৪ বছর তিনি সরকারি প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনে সর্বশেষ তিনি সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন।

এম কে আনোয়ারপরে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তার দল বিএনপি ১৯৯৬ সালে বিরোধী দলে চলে যাওয়ার পর রাজপথের আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সমন সক্রিয়। হরতালের দিনগুলোতে রাজপথে কেডস পরা এম কে আনোয়ার ছিলেন নিয়মিত।

জীবনের শেষদিকে অবশ্য তিনি রাজনীতিতে খুব সক্রিয় থাকতে পারেননি। একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবাসের পর ভারতে চিকিৎসা শেষে তিনি এলিফ্যান্ট রোডের বাসাতেই অবস্থান করতেন। দলীয় সভা-সমিতিতে না গেলেও তার এলাকার মানুষ অবশ্য নিয়মিতই ভিড় করত তার বাসায়।