জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে ‘রজতজয়ন্তী’ পালন কর্মসূচির প্রথম দিন ছিল বুধবার। গাজীপুর ক্যাম্পাসে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এদিনটি পালিত হয়। রজত জয়ন্তী উপলক্ষে গোটা ক্যাম্পাসও সেজেছে বর্ণিল সাজে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে দুপুরে সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে রজত জয়ন্তী উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন। পরে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ’-এই শ্লোগানকে উপজীব্য করে একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউটি মূল ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এতে সকল অনুষদের ডীন, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শন, উদ্বোধনী দিবসের আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ। আলোচনা সভায় এডভোকেট রহমত আলী এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মমিন চৌধুরী এবং প্রাক্তন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর ও বর্তমানে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)-র ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, আমি জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী যাতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্ব, তাঁর নীতি ও ত্যাগের মহান আদর্শ সম্বন্ধে সঠিকভাবে জেনে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে পারে, সে লক্ষ্যে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে কলা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা নির্বিশেষে সকল ধারার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ শীর্ষক একটি পূর্ণ কোর্স অবশ্যপাঠ্য করেছে। আমি জেনে আরও খুশি হয়েছি যে, ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ক্যাম্পাসে খুব শীঘ্রই ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এর কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, রজতজয়ন্তীর এই আনন্দঘন মুহুর্তে আমি এ বিশ^বিদ্যালয় এবং এর সঙ্গে অধিভুক্ত সকল কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোনো সভ্যতা যেমন একদিনে গড়ে ওঠে না, অনুরূপভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানও একদিনে গড়ে ওঠে না। এজন্য আবশ্যক হয় বহু জনের বহু সময়, শ্রম ও সাধনার। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন এবং এর পরিচালনে নেতৃত্বদান করেছেন তাদের প্রত্যেকের অবদান আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। তবে এখনও আমাদের পথ চলার অনেক বাকি। বিশ^বিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আমি এর সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজসমুহের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যসহ গোটা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় পরিবার ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২১শে অক্টোবর গাজীপুরস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এবছর এ বিশ্ববিদ্যালয় দু’টি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে রজতজয়ন্তী দিবস উপলক্ষে পৃথকভাবে নানা অনুষ্ঠাণের আয়োজন করেছে। রজতজয়ন্তী দিবস উপলক্ষে বৃহষ্পতিবার শেষদিনে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি উদযাপিত হতে যাচ্ছে। গাজীপুরসহ সারা দেশের আঞ্চলিক কেন্দ্র ও কলেজগুলোতে এসব কর্মসূচি একযোগে পালিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীসহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ শেষদিনের অনুষ্ঠাণে অংশ নিবেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।