দীর্ঘ ছয় বছরের বিপুল কর্মযজ্ঞ শেষ রাজধানীর মৌচার-মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ ফ্লাইওভারের সাত রাস্তা, বাংলামোটর ও হলি ফ্যামিলি অংশের ওঠানামার পথ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছিল।বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৌচাক, রাজারবাগ, শান্তিনগর ও মালিবাগ অংশের বাকি সব পথও খুলে দেওয়া হয়।গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উড়ালসড়ক যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। সময় বাঁচাবে। কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উড়ালসড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উড়ালসড়ক নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। উড়ালসড়কসহ সব সড়ক ব্যবহারে যতœবান হতে ও ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলার জন্য আহ্বান জানান।ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে আর্থিক ক্ষমতা থাকলে মানুষ গাড়ি কিনছে। ফলে যানজট বাড়ছে। মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে গাড়ি দ্রুত চলবে। চলাচলের সুবিধার জন্য এই উড়ালসড়কের কিছু জায়গায় নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।উড়ালসড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চে এই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়ালসড়কের এক দিক খুলে দেওয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলে খুলে দেওয়া হয় ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। এখন খুলে দেওয়া হলো উড়ালসড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।চার লেনের এই উড়ালসড়ক ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়ালসড়ক প্রকল্প। বেলা সাড়ে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং সৌদি আরব দূতাবাসের ইসলামী বিভাগের প্রধান সাদ আল খাতানি।আর পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণি, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন মৌচাক এলাকায় বানানো অনুষ্ঠান মঞ্চে।ফ্লাইওভারের মৌচাক থেকে মগবাজার হয়ে ইস্কাটন, শান্তিনগর থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন ঘোষণার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের প্রতি অনুরোধ, ব্যবহারে যতœবান হবেন। ট্রাফিক রুল মেনে চলবেন। জাতীয় সম্পদ মনে রেখে সেটা ব্যবহার করবেন।ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসাবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে, কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।সরকারের ‘ধারাবাহিকতা থাকলে’ উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর কারণেই উন্নয়নের কাজ ‘সফলভাবে’ শেষ করা সম্ভব হয়েছে।২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে, বলেন শেখ হাসিনা।গণভবনের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দৈনিক ৫০ হাজার যানবাহন এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে। নিচের সড়ক আগের মতোই ব্যবহার করা যাবে। ফলে যানজট থেকে নগরবাসী মুক্ত হবে।মৌচাকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন; প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।নগরবাসীকে ফ্লাইওভার ‘উপহার দেওয়ায়’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী মানুষের চোখেই স্বপ্ন দেখেন। এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেই এই শহরের মানুষের হাতে তাদের স্বপ্নের ফ্লাইওভার তুলে দিয়েছেন। এজন্য ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন, ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও কয়েক ধাপে তা বেড়ে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ লাখ টাকায় পৌঁছায়।স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এ প্রকল্পের প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা, যা অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় ‘অনেক কম’।ঢাকার কেন্দ্রভাগে অন্যতম ব্যস্ত এবং চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা), বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে লুপ বা র‌্যাম্প রাখা হয়েছে।ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ হয়েছে তিন ভাগে। একটি অংশে রয়েছে সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত, আরেকটি অংশে শান্তিনগর-মালিবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত এবং শেষ অংশটি বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত।এর মধ্যে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত অংশটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ ফ্লাইওভারের ইস্কাটন-মৌচাক অংশের যান চলাচল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।আর ফ্লাইওভার থেকে সোনারগাঁও হোটেলের দিকে নামার র‌্যাম্পটি গতবছর ১৭ মে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি’ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর নির্মাণ কাজ করে।