স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে সফরে যাওয়ার আগেই, আগামী ৩০ নভেম্বরের আগেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। তারা টার্ম অব রেফারেন্স (টিআর) তৈরি করবে এবং সেই টিআর এর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ-মিয়ারমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।সু চির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করেছেন।

বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা হাঁটা শুরু করেছি, গন্তব্যে পৌঁছাবই। আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের কথা বলেছি। এভাবে সমাধান না হলে এরপর আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে যাবো। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর ৫ দফার কথা আমরা জানিয়েছি। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে তারা।রোহিঙ্গার সঙ্কটের মধ্যে গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) মিয়ানমার সফরে যান কামাল। নে পি দোতে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে একটি ‘যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“প’ গঠনে দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী এবং সবশেষে সেদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অং সান সু চি’র সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা কেউই অস্বীকার করেনি যে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবেন না। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি মিয়ানমারের নেতাদের বলেছি, রোহিঙ্গারা যদি বেশি দিন বাংলাদেশে থাকে, তাহলে বিশ্ব জঙ্গিবাদের সঙ্গে ওরা একত্রিত হতে পারে। এটি যদি হয় তাহলে তোমরা এবং আমরা সবাই সমস্যায় পড়বো। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। তবে তারা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চায়। সেজন্য কিছুটা সময় লাগবে।আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘সু চি’কেও আমি একই কথা বলেছি। ওনাকে বাড়তি যা বলেছি তা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। একইভাবে আপনিও মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাখাইনরা যে বাংলাদেশে এসেছে এটি নতুন কোনও ঘটনা নয়। আজ থেকে ১০০ বছর আগেই তো তারা কুয়াকাটায় এসেছিল। তারাতো এখনও আছে।মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার তখন আমাদের বলেছে, এটি মিয়ানমার সেনাবাহিনী করেনি। দুষ্কৃতিকারীরা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।’ এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কোনও দুষ্কৃতিকারীর অবস্থান নাই। বাংলাদেশ কোনও দুষ্কৃতিকারীদের প্রশ্রয় দেয় না। তোমাদের দেশে যদি কোনও দুষ্কৃতিকারী থাকে তাদের তালিকা দাও। আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না।এ সময় সু চি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি অনুরোধ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সু চি বলেন, রোহিঙ্গারা তো মিয়ানমারে ফিরে আসতে চায় না। তোমরা ওদেরকে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করো, অনুপ্রাণিত করো। সু চি’র অনুরোধের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তোমরা যদি তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় বাসস্থান এবং জীবনধারণের ব্যবস্থাপনা সুনির্দিষ্ট করতে পারো, তোমাদের প্রতি আস্থা তৈরি করতে পারো, মোট কথা একটি শান্তির পরিবেশ যদি নিশ্চিত করতে পারো, তাহলে ওরা আসবে। তবে এর জন্য তোমাদেরকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করতে হবে।এ সফরকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, না দেখি না। এটি একটি সফল ট্যুর।