বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছেন। তার দাবি, এই হামলা পরিকল্পিত।শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ওই হামলার পর এর প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। একটা পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক কাজে এ হামলা নিন্দনীয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারগামী খালেদার সঙ্গে অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি রয়েছেন ফখরুলও।ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পার্বত্য এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় নিজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন, এর আগে আমি যখন চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম, তখনো তারা হামলা চালিয়েছিল। সুতরাং বলা যায়, তারা চায় না, বিএনপি ভালো কোনো কাজ করুক।এর আগে, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফেনীর ফতেহপুর এলাকার দেবীপুরে খালেদার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। বহরে থাকা বিএনপির নেতারা বলছেন, ৪০-৫০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৫-২০টি গাড়ি। এসব গাড়ির বেশিরভাগই গণমাধ্যমের।
রোহিঙ্গাদের দেখতে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ফেনীতে হামলার মুখে পড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।শনিবার বিকালে চৌদ্দগ্রাম পেরিয়ে ফেনী জেলার সীমানার শুরুতে মোহাম্মদ আলী বাজারে এই হামলা হয়। ফেনী জেলা শহরের ৬-৭ কিলোমিটার আগে এই স্থানটি।খালেদা জিয়ার গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর একদল যুবক ওই হামলা চালায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গণমাধ্যমসহ বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি।একাত্তর, ডিবিসি, চ্যানেল আই, বৈশাখী ও যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন। একাত্তর টিভির এক কর্মী ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন।এছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এদিকে বিকাল ৫টার দিকে খালেদা জিয়া ফেনী জেলা শহরের পৌঁছেছেন বলে তার সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িসহ বহরের ৩০টির মতো গাড়ি মোহাম্মদ আলী বাজার অতিক্রমের পরপরই ১৫-২০ যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে উঠে আসে। কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে।তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে ফেনীতে যাত্রাবিরতির সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সড়কে অবরোধ করে বলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। ফেনীর বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে শনিবার আকস্মিক এই অবরোধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে ক্ষমতাসীনরা করেছে বলে বিএনপির অভিযোগফেনীর বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে শনিবার আকস্মিক এই অবরোধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে ক্ষমতাসীনরা করেছে বলে বিএনপির অভিযোগচট্টগ্রামমুখী খালেদা জিয়ার বহরে দেড় শতাধিক গাড়ি রয়েছে। ফেনী সার্কিট হাউসে যাত্রাবিরতির পর সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের পথে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন। ফেনী সার্কিট হাউজে খালেদাকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ফেনী জেলা সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রেহানা আখতার রানু প্রমুখ।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে রোববার বেলা ১১টায় সড়ক পথে কক্সবাজারে উদ্দেশে রওনা হবেন বিএনপি নেত্রী। সেখানে সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে সোমবার উখিয়ার বালুখালী, বোয়ালমারা ও জামতলী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তার।শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে রওনা হওয়ার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেতার সঙ্গে ছিলেন।এই কর্মসূচি সফলে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে ফখরুল সকালে বলেছিলেন, আমরা আশা করি, পথিমধ্যে সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা পাব। পুলিশ মহাপরিদর্শক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তারা দেশনেত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এবং তার সফর যাতে সুন্দরভাবে হয়, তাতে সহযোগিতা করবেন।বিএনপি মহাসচিব জানান, খালেদার এই সফরে ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ২২ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে কক্সবাজারের যাওয়ার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে আটকে দেওয়া হয়।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, ‘নিয়ম মেনে’ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটির মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়ার উদ্যোগ না নেওয়ায় তাদের আটকানো হয়েছে।এর আগে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে হামলার শিকার হয়েছিল বিএনপি মহাসচিব ফখরুলের গাড়িবহর।