প্রভাবশালী বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখাতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।আবার রাজনীতিবিদ বা রাজনীতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুদক অনেক সক্রিয়। ফলে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান’ এমন ব্যবস্থা দুদক প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সংস্থাটি সম্পর্কে এ অভিমত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।রবিবার টিআইবি’র মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক পরিচালিত গণশুনানি: কার্যকারিতা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।দুদকের ওপর টিআইবি’র আস্থা কতটুকু এমন প্রশ্নে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদক এখনও এমন অবস্থায় যেতে পারেনি যে তাদের ক্লিন একটি প্রতিষ্ঠান বলা যাবে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা ক্লিন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে আমাদের সন্দেহ নেই।

সংস্থাটির বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন,আমি মনে করি, দুদকের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে একটা উদ্দীপনা আছে,আগ্রহ আছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সামর্থ্যও আছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে তাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। সব সময় পারছে না, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।

আমরা দেখতে পাই, যখন প্রভাবশালী বা ক্ষমতার কাছাকাছি লোকের অভিযোগ দেখতে পাই তখন দুদক প্রত্যাশিত কাজ করতে পারে না। রাজনীতিবিদ বা রাজনীতিমুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুদক আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এ বিষয়টির প্রতি দুদককে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে তারা প্রমাণ করতে পারবে দুদক প্রভাবমুক্ত। তবে আমাদের দৃষ্টিতে দুদক পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। প্রভাব নেই এটা প্রমাণের দায়িত্ব দুদকের। তারা যখন ব্যক্তির অবস্থান বা পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেদের কাজ করতে পারবে তখন আমরা বলতে পারব দুদক প্রভাবমুক্ত।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দুর্নীতির তদন্ত চিঠি দিয়ে বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা এলে দুর্নীতি দমন কমিশনে কী ধরনের প্রভাব পড়ে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ ধরনের ঘটনার সমালোচনা করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।তিনি বলেন, আদালত যে দৃষ্টান্ত দিলেন তা নিঃসন্দেহে একটি বিতর্কিত অবস্থান। এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে এবং হচ্ছে। এটা যদি অযৌক্তিক হয়ে থাকে তাহলে শুধু আদালত নয় কোনও কর্তৃপক্ষেরই এ ধরনের কাজ করা উচিত নয়। তবে দুদকেরও সে সৎ সাহস থাকতে হবে যে তারা সেটা প্রত্যাখ্যান করবে। সেই এখতিয়ার কাগজে কলমে দুদকের আছে। তবে প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে।

টিআইবি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় গণশুনানিতে মোট ১৯৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে উপজেলা ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে। এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে- পল্লী বিদ্যুৎ, রাজউক, সেটেলমেন্ট অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বিআরটিএ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, সমাজসেবা কার্যালয় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক।

ভূমি অফিসে কী ধরনের অভিযোগ বেশি আসে এর উত্তরে টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম বলেন, নামজারিতে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ, প্রভাবশালীদের দ্বারা ভূমি দখল, প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়া এসব অভিযোগই বেশি ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদনে গণশুনানি কার্যক্রম আরও বেশি কার্যকর ও গতিশীল করার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তাদের বদলি, অবসর বা অন্য কারণে যাতে অভিযোগের সমাধানে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যবস্থা করা। একটি শুনানির পর আবার ফলোআপ শুনানি বা প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী কী পরিমাণ কাজ হয় তা দেখভাল করা। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ রয়েছে সেসব খাত ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পৃথক পৃথক গণশুনানির আয়োজন করা। এছাড়া গণশুনানিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।