রাখাইনে নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারির ভাইস প্যাটার্ন শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাবো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে এবং বাংলাদেশে আসা সেদেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা শুধু এ অঞ্চলে নয়,এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। মিয়ানমার সরকারের এমন আচরণের জন্য সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে, নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের (গণমাধ্যম) অবাধ স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ -এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের (সিপিসি) উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সংসদ ভবনে অবস্থিত সিপিএর ঢাকা অফিস জানিয়েছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংসদীয় এই ফোরামে কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি রাষ্ট্রের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদসহ ১৮০টি ব্রাঞ্চ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি দেশসহ ১৪৪টি সিপিএ ব্রাঞ্চ এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। ১ নভেম্বর থেকেই সম্মেলনে অংশ নিতে ইচ্ছুক সদস্য দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সাংসদরা ঢাকা আসতে শুরু করেন। বর্তমান কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য, অন্যান্য প্রতিনিধিসহ সাড়ে পাঁচশ’র মতো প্রতিনিধি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ৫৬ স্পিকার ও ২৩ জন ডেপুটি স্পিকার রয়েছেন।

গ্রেট ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিপিএর প্যাট্রন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বাণী পাঠিয়েছেন। ২০১৭ সালের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিপিএর ভাইস প্যাট্রন। ২০১৪ সাল থেকে সিপিএর বর্তমান চেয়ারপারসন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনিই সিপিএর শতবর্ষের ইতিহাসে এই পদে প্রথম নারী। এবারের সম্মেলনে তিনি বিদায় নিচ্ছেন এবং ৭ নভেম্বর নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারপারসন পেতে যাচ্ছে সিপিএ।

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটিশ আইল্যান্ড ও মেডিটেরিয়ান, কানাডা, ক্যারিবিয়ান আমেরিকাস ও আটলান্টিক, ভারত, প্যাসিফিক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া- এ নয়টি অঞ্চল নিয়ে সিপিএ গঠিত। বিশ্বের ২৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করে।