যে আইনের আওতায় রাস্তাঘাট উন্নয়নে আখ চাষীদের কাছে থেকে উপকর আদায় করা হত সেই আইনটিই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।আখচাষিদের কাছে থেকে সুগারমিল এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন উপ-কর অর্ডিন্যান্স (রোড ডেভেলপমেন্ট সেজ) রহিত করে ‘চিনি (রাস্তাঘাট উন্নয়ন উপকর) আইন ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আখচাষিদের কাছ থেকে কর নিতে পারবে না কোনো সুগার মিল। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
১৯৬০ সালের সুগার (রোড ডেভেলপমেন্ট সেজ) অর্ডিন্যান্সে ‘যারা আখ চাষি, তাদের আখ বিক্রির টাকা থেকে কর কেটে রাখা হয়। এটা হিসাব করা হয় মণপ্রতি। অর্থাৎ কী পরিমাণ আখ নিয়ে আসলেন সেটার আলোকে। আগে ছিল মণপ্রতি ১২ পয়সা। পরে চলতি বছরেই সেটা ৫০ পয়সায় উন্নীত করা হয়। শফিউল আলম বলেন, সুগার মিল এলাকায় রাস্তাঘাট ব্যবহারের জন্য আখচাষি কৃষকদের কাছ থেকে উপ-কর নেওয়া হতো। এই উপ-কর তেমন কোনো কাজে আসছে না। এখন দেশের সব জায়গার রাস্তাঘাট, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, পৌরসভা জেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট করে ফেলছে। সুগার মিল কর্তৃপক্ষের আলাদা করে রাস্তাঘাট তৈরি ও সংস্কারের জন্য অবশিষ্ট নেই।তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে এই আইনটি আর রাখার প্রয়োজন নেই। এটা কৃষকদের জন্য বাড়তি একটা বোঝা। কর দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কর দেওয়ার পর কোনো সেবা তারা পায় না। সরকার কৃষকদের এই কর থেকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মণপ্রতি এই কর আদায় করা হতো।আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আইন সংসদে যাওয়ার পর অর্ডিন্যান্সটি রহিতকরণ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষে সচিবালয়ে ফিরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান আমলে প্রণীত অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করতে ‘বাংলাদেশ চিনি (রাস্তাঘাট উন্নয়ন উপকর) আইন- ২০১৭’ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হয়।সুগার মিল এলাকার যারা চিনি উৎপাদন করবে রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য তাদের কাছ থেকে একটা উপকর নেওয়া হত। এই উপকরটা আসলে তেমন কোনো ইউজফুল না।এখন এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড রাস্তাঘাট করে ফেলেছে। সুগার মিল কর্তৃপক্ষের আলাদাভাবে রাস্তাঘাট মেরামত করা বা তৈরি করার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট নাই।মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনার পর ‘দ্য সুগার (রোড ডেভেলপমেন্ট সেস) অর্ডিন্যান্স-১৯৬০’ আইনটি না রাখার পক্ষে মতৈক্য হয়।প্রয়োজনীয়তা যেহেতু নাই এবং কৃষকদের জন্য একটা বোঝা, বাড়তি একটা কর দেওয়া লাগে এজন্য সরকার এই আইনটি রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি জানান, ওই অর্ডিন্যান্সটি রহিত করতে এখন একটি আইন সংসদে যাবে, তখন ওটা আনুষ্ঠানিকভাবে রহিত হয়ে যাবে।গত ১৩ জুন মন্ত্রিসভা আখ চাষিদের কাছে থেকে সংগ্রহ করা রাস্তাঘাট উন্নয়ন উপকরের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়ে আইনটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। এখন এই আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন না দিয়ে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা।এত দিন প্রতি মণ আখের জন্য চাষিদের কাছ থেকে উপকর হিসেবে সুগার মিলগুলো ১২ পয়সা করে কেটে রাখত। এই উপকরের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ পয়সা করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।নীতিগত অনুমোদনের পরেও কেন আইনটি বাতিল করা হচ্ছে- সেই প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, “আগে সিরিয়াসলি চিন্তা করা হয়নি। মন্ত্রিসভা যখন পর্যালোচনা করেছে, তখন দেখেছে আইনটির আদৌ প্রয়োজন নেই, কৃষকদের জন্য হয়রানি। কতগুলো উপকর কৃষকদের উপর খামাখা চাপানো, খুব অর্থ যে আসে তা নয়। মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে মত দিয়েছে বাতিল হওয়াই ভালো।এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আইনি কাঠামো দিতে ‘আবহাওয়া আইন- ২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত বছরের ২২ অগাস্ট আইনটি মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়।শফিউল আলম বলেন, আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনো আইন আমাদের ছিল না। এটা নতুনভাবে প্রণীত বহুল প্রত্যাশিত একটা আইন। পুরনো বিষয়গুলো নিয়ে নতুন আইনটি করা হয়েছে, এগুলো অলরেডি চলমান আছে।আইনের মূল ফোকাসটি হল এই আইনের মাধ্যমে বিদ্যমান আবহাওয়া অধিদপ্তরকে একটি আইনি কাঠামো দেওয়া। প্রস্তাবিত আইনে ৩১টি ধারা রয়েছে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়।