প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পান্ডৃলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রকাশ ও বিতরণের বিভিন্ন ধাপে জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এমএলএসএস পর্যন্ত সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে সম্মানী গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।এছাড়া পাঠ্যবই প্রকাশের েেত্র রাজনৈতিক বিবেচনা এবং বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন না করা ও এনসিটিবি’র প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করে টিআইবি। পাশাপাশি বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপš’ী বলেও মনে করে সংটি।সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষক মোরশেদা আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে অনিয়মের ব্যাপক চিত্র উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পান্ডৃলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এসব কমিটি গঠনের েেত্র মতাসীন দলের মতাদর্শীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। কোনো কোনো েেত্র লেখা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের প্রভাব দেখা যায়। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, শিাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়।পাঠ্যবই ছাপার েেত্র বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা বলা হয়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের একাংশ পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বানের আগেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাক্কলিত দর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দরপত্র দাখিল করে। বিতরণ পর্যায়েও নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, কয়েকটি জেলায় নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই সরবরাহ করা না হলেও পরে সঠিক সময়ে প্রাপ্তি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেণে বলা হয়, এনসিটিবির পান্ডুলপি প্রণয়ন-প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ, সঠিকভাবে পন্ডুলিপি রেখা হচ্ছে না, দলীয় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব বিদ্যমান দেখা যায়। পাঠ্যবই ছাপায় দুই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। প্রথমত, ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা আদায় এবং কার্যাদেশ প্রদানে দুর্নীতি। প্রতিবেদনে এসব সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়।টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, পান্ডুলপি প্রণয়ন এবং পাঠ্যবই প্রকাশের েেত্র চ্যালেঞ্জ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে। বিশেষ করে পান্ডুলপি প্রণয়নের েেত্র ১০টি এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে সাতটি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দরপত্র নির্দেশিকা তৈরি, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দরপত্র খোলা, সিএস তৈরি, কার্যাদেশ প্রদান, প্রতি লটের কাগজের হিসাব, কাগজ বরাদ্দপত্র জারি, কার্যাদেশ অনুযায়ী উপজেলায় বই সরবরাহের তালিকা তৈরি, বই প্রাপ্তি স্বীকার অনুযায়ী বিল পরিশোধের সুপারিশের জন্য সম্মানী গ্রহণ করা হয়।এভাবে গত তিন বছরে ৫০ লাখ টাকা ৯৬ হাজার ৭০০ টাকা গ্রহণ করেছে এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এক প্রশ্নের জবাবে মোরশেদা আক্তার বলেন, সরকারি বাৎসরিক সম্মানীর বাইরে অবৈধভাবে মুদ্রণ কাজের সম্মানী চেয়ারম্যান থেকে এমএলএসএস পর্যন্ত গ্রহণ করে থাকেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো অফিসিয়াল নথি সংরণ করে না এনসিটিবি।যে কারণে পান্ডুলিপি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করার েেত্র বস্তুনষ্ঠতা থাকে না। তিনি বলেন, যে সরকার যখন মতায় থাকে সেই সরকারের আদর্শের সমর্থক ব্যক্তিবর্গের প্রাধান্য থাকে। একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চাপের েেত্র বই সংশোধিত ও পরিবর্তিত হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। এসব কারণে মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দেশ।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পান্ডুলিপি প্রণয়নে সমতা ও পেশাগত দতার ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া পরিদর্শন ও তদারকিতে ঘাটতির ফলে সব েেত্র সময়মতো মানসম্মত বই সরবরাহ করা হয় না।দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে গেলে দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে জানিয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, শিাখাতকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। এ সময় অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে এনসিটিবিকে একটি স্বাধীন কমিশনে রূপান্তর করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনসহ অন্যান্য বিষয়ে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্বনামধন্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করে একটি কমিশন গঠনের দায়িত্ব দিতে হবে। কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত রাখা এবং সিলেবাস ও টেক্সটবুক কমিটির সদস্যদের যোগ্যতা ও মেয়াদ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে এ সময়। পাশাপাশি শিাক্রম প্রকাশ ও উন্মুক্তকরণ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের এনসিটিবির সদস্য হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।