সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর কোনও রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না’ জানিয়ে দুদককে পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের মর্যাদা খর্ব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।একইসঙ্গে এ মামলায় জারি করা রুল নিষ্পত্তি করেছেন আদালত। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠি অবৈধ এবং বিচারপতি জয়নুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কোনও বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার রায় পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করেন।আদালতে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। পাশাপাশি এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।আইনজীবী খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠি অবৈধ, যার আইনগত কোনও ভিত্তি নেই। এই চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে সাত বছর ধরে অনুসন্ধান চলতে থাকায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তবে এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী মঈনুল হোসেন বলেন, ‘এই রায় পজিটিভ। কারণ, আদালত বলেছেন- সাত বছর ধরে অনুসন্ধান চলছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই রায়টি পজিটিভভাবে দেখছি।গত ৩১ অক্টোবর এই চিঠির বৈধতা সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষে তা যে কোনও দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার পর্যবেক্ষণসহ এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।এর আগে এ সংক্রান্ত রুলের ওপর বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। এছাড়া, অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক এএম আমিন উদ্দিন।উল্লেখ্য,সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেয়া রায় সবার ওপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, তার দেয়া রায়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনও রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না।দুদককে গত ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তরফদার।এরপর গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।রুলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। গত ১৯ অক্টোবর রুলের ওপর প্রথম শুনানি শুরু হয়।এসময় দুদক আদালতকে জানায়, সুপ্রিম কোর্ট এই চিঠি দিলেও ওই বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান থেমে থাকেনি। আর দুদকের চাহিদা অনুযায়ী ওই বিচারকের বিষয়ে নথিপত্রও পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।এরপর রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৩১ অক্টোবর মামলাটি যে কোনও দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। এরপর আদালত মঙ্গলবার এ মামলার ওপর পর্যবেক্ষণসহ রায় দেন।