প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে তোষামোদী ছেড়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ইসির ভূমিকা মূল্যায়ন করে শনিবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি সিইসি কে এম নূরুল হুদার উদ্দেশে এই আহ্বান জানান।বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ডাক মজলুম জননেতা মওলানা হামিদ খান ভাসানী দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন ভাসানী স্মৃতি সংসদ।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের গুণগান করেছিলেন সিইসি নূরুল হুদা, যা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনায়ও পড়তে হয়েছিল তাকে।পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বলেছিলেন নূরুল হুদা।দুটি ঘটনার উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তিনি তোষামোদী করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন আনতে চান। আজকে বিএনপিকে খুব খুশি করার চেষ্টা করছেন। আবার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ দিয়ে আওয়ামী লীগের কথা বলছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভুলে যাই যে মওলানা আব্দুল খান হামিদ খান ভাসানীই প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পাকিস্তানকে আসসালামু আলাইকুম বলেছিলেন। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণি ঝড়ের পর যখন পাকিস্তানের কেউ দেখতে আসেনি তখন তিনি পল্টন ময়দানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ওরা কেউ দেখতে আসেনি। আসসালামু আলাইকুম পাকিস্তান, আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আজকে আমরা বলি একজনই (বঙ্গবন্ধু) সব করেছেন। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী তার সারাটা জীবন মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। শোষনকে দূর করবার জন্যে, উপমহাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।ফখরুল বলেন, আমার গতকাল খুব দুঃখ হয়েছে। আমি যখন টাঙ্গাইলের সন্তোস গিয়ে পৌছলাম মওলানা ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, দেখি সেখানে কোনো আয়োজন নেই। প্রতিবার দেখি সেখানে কিছু আয়োজন হয়। এবার সরকার সেটা করতে দেয়নি। কি দুর্ভাগ্য এই জাতির, যে জাতি সত্ত্বা যাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে, যারা এই অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আজকে আমরা তাদেরকে আস্বীকার করি। এসময় আওয়ামী লীগের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে সমাবেশে সবাইকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে আজকের সমাবেশ কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ না। এটা নাগরিক সমাবেশ। ভালো কথা, কিন্তু আপনারা কি করলেন সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ছাত্ররা না আসলে শিক্ষকদের চাকরি থাকবে না। ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে না আসলে পাঁচ দিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে। এতে কি শিক্ষা দিচ্ছেনফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, কাউকে তোষামোদী করার তো দরকার নেই। এটার প্রয়োজন নেই। এসব কথা বললে লাভ হবে না। কাজ দেখান। কাজের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে আপনারা নিরপেক্ষ প্রমাণ করুন। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আনতে সিইসি ওই ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য আসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে।

ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। দলটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে ভোট হলে সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না।ফখরুল বলেন, সব কিছু আওয়ামী লীগ করে যাবে। তারা মহাসুখে হেলিকপ্টারে চড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে।
আর আমরা একটা মিটিংও করতে পারব না, একটা সত্য কথা বলতেও পারব না, আমরা কোর্টের বারান্দায় ঘুরব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সপ্তাহে সপ্তাহে হাজিরা দিতে হবে, আমাদের সব নেতা-কর্মীদের হাজিরা দিতে হবে- এভাবে নির্বাচন হবে না।সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিতের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।আলোচনায় এই দাবি তুলে ফখরুল সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বিএনপি অংশ না নিলে আগামীতে নির্বাচন হবে না।এখন ক্ষমতায় আছেন কিছু দিনের জন্য। খুব আনন্দিত হচ্ছেন, বগল বাজাচ্ছেন যে আমরা তো ক্ষমতায় এসে যাব, কোনো চিন্তা নেই, বিএনপি না আসলে না আসবে।বিএনপি না আসলে হবে না। আর গেলাতে পারবেন না। এদেশের মানুষকে আর ওই ধরনের নির্বাচন গেলাতে পারবেন না। এদেশের মানুষ অবশ্যই আগামী নির্বাচনে সমস্ত দলগুলোকে দেখতে চায়।সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, মানুষের কাছে যান, তাদের হৃদয়ের ভাষাটা বুঝুন, চোখের ভাষাটা বুঝুন, দেওয়ালের লিখনটা পড়ুন, দেখুন তারা কী বলেছে।তারা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন সম্ভব যদি একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়।

মজলুম জননেতা খ্যাত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যু দিবসের সংবাদ জাতীয় দৈনিকসহ গণমাধ্যমে ছোট করে প্রকাশে’ নিজের বেদনা ও ক্ষোভের কথাও সভায় বলেন এক সময়ের বাম রাজনৈতিক কর্মী ফখরুল।ভাসানী স্মৃতি সংসদের সভাপতি জিয়াউল হক মিলুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুনির হুদার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- সাবেক মন্ত্রী জাকারিয়া খান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ( জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নজমুল হক নান্নু, মেহেদী আহমেদ রুমী প্রমুখ।