নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকার সরকারি কলেজ মাঠে সংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকীর (৬৩) সন্ধ্যা ৬টায় শিল্পীর নিজ হাতে গড়া কার্লি গ্রামের বাউল বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।নামাজে জানাজার আগে বারী সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী সবার কাছে তার বাবার আত্মার শান্তি কামনা করেন। এর আগে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন-কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরী, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জি.এম খান পাঠান বিমল, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান রতনসহ হাজারো মুসল্লি। পরে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।এর আগে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকীর (৬৩) প্রথম নামাজে জানাজা সকাল ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বারী সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নেওয়া হয় মরদেহ। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা হয়। এর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সোয়া দুটার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আধ্যাত্মিক ও লোকগানের এই প্রথিতযশা শিল্পী।

গত কয়েকদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন বারী সিদ্দিকী। হাসপাতালের কাস্টমার সার্ভিসের কর্মকর্তা মাহমুদুন্নবী বলেন, রাত সোয়া দুইটার পর বারী সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেছেন। গত রোববার (১৯ নভেম্বর) চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বলেছিলেন, চিকিৎসকরা কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি, বাবা আগের মতোই আছেন। কোনো শারীরিক উন্নতি দেখছেন না তারা। সাব্বির সিদ্দিকী তখন আরও জানিয়েছিলেন, তার বাবা গত দুই বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বছর থেকে সপ্তাহে তিনদিন কিডনির ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন। ডায়াবেটিসও ছিল তার। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৮ নভেম্বর শনিবার ভোররাতে বারী সিদ্দিকীকে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকরা।

বারী সিদ্দিকীর দুটি কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয় বলে তখন সাংবাদিকদের জানান চিকিৎসকরা। বহু বছর ধরে সংগীতের সঙ্গে জড়িত এই গুণী শিল্পী। তবে দেশবাসীর কাছে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পান ১৯৯৯ সালে। ওই বছর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে ছয়টি গান করেন তিনি, যার প্রতিটিই বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’ এবং ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’। এসবের বাইরেও তিনি কয়েকটি সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেছেন। তার গাওয়া গান নিয়ে বের হয়েছে অডিও অ্যালবাম। নিয়মিত গান করেছেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ও গানের আসরে। এসব আসর ছিল ব্যাপক দর্শক-শ্রোতা নন্দিত ।