কয়েক দিন ধরে শুরু হয়েছে হালকা শীতের আমেজ। তাই মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রস আহরণের জন্য পাবনার বিভিন্ন এলাকার গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চাঁছা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আর ক’দিন পরই গাছিদের মাঝে শুরু হবে খেজুর রস সংগ্রহের ভরা মৌসুম। পাবনায় খেঁজুর বাগান সংখ্যা কম হলেও প্রায় প্রতিটি গ্রামে ও বাড়ির জমির আইল আর রাস্তার ধারে রয়েছে খেজুর গাছ।

এ সব গাছের খেজুর খাওয়া হয়না। মূলত রস সংগ্রহ করা হয়। খেজুর গাছ ৭-৮ বছর বয়স থেকে রস দেয়া শুরু করে।
দো-আঁশ ও পলি মাটিতে জন্মানো গাছে বেশি রস হয়। রস আহরণের জন্য সাধারণত কার্তিক মাস থেকে গাছ প্রস্তুত শুরু করেন গাছিরা। রস পাওয়া যায় প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। পাবনা জেলার সব উপজেলায় খেজুর গাছ থাকলেও মাত্র হাতে গুনা কয়েকটি এলাকায় গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করে।

সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গামে, বাঙ্গাবাড়িয়া, গয়েশপুর, হেমায়েতপুর, দোগাছি, ভাড়ারা, টেবুনিয়া, মালিগাছা, মজিদপুর সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ দেখা যায়। বিভিন্ন এলার গাছিরা এসব এলাকায় এসে তাবু বেধে তারা অবস্থান করে, বিকেলে তারা গাছে হাড়ি বেধে রাখে এবং ভোরে গাছ থেকে রস পেরে নিয়ে আসে। রস জ্বালিয়ে গুর, পাটারী ইত্যাদি তৈরি করে থাকে ১শ’ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে। শীতের দিনে এসব গুর ও পাটারী দিয়ে দুধ চিতই, পুলি পিঠা, ভাঁপা পিটা, পাটি সাপটা ইত্যাদি তৈরি করেন গ্রামের মানুষেরা।

পাবনা সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের রহম গাছি জানান, বছর দশেক আগেও গাছিরা ভোরে গাছ থেকে রস নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ফেরি করতেন। শীতের সকালে লোকজন রস কিনে পান করতেন আবার অনেকেই পিঠা-পায়েস রান্না করতেন। গাছির পরিবারের লোকজন ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গুড় আর পাটালী তৈরীতে। এখন আর আগের মতো গাছিরা স্বপরিবারে ব্যস্ত থাকেন না। কারণ আগের মতো আর খেজুর গাছ নেই। প্রতিবছর ইটভাটায় জ্বালানির কাজে ব্যবহারে নিধন হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার খেজুর গাছ। এ ছাড়াও পাবনা জেলার, সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, আটঘরিয়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ঈশ্বরদীর গ্রাম অঞ্চলে গাছিরা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।