নওগাঁর বদলগাছীতে ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসে (ইউএনও) দুপক্ষের মধ্যে মারামারি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ইউএনও’র অনুপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় মঙ্গলবার ইউএনও অফিসের উচ্চমান সহকারী রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বদলগাছী লাবণ্য প্রভা পাইলট ও কমিউনিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে কোন মূর্হুতে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে আশঙ্খা করা হচ্ছে।বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বদলগাছী লাবণ্য প্রভা পাইলট ও কমিউনিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্যপদে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের জন্য গত ১০ অক্টোবর’১৭ তারিখে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একটি পদের বিপরীতে ১১জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে অত্রস্কুলের শিক্ষক দেওয়ান আবু হুরাইরা ও নাজমুল হকও আবেদন করেন। সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় অত্র স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও একটু বিলম্ব হয়। নওগাঁ সরকারি কেডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ডিজি প্রতিনিধি নাসরিন বানু পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য ইউএনও অফিসে অবস্থান করছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য।এদিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ কমিটি জাহাঙ্গীর আলম নামে এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। পরীক্ষা সাময়িক ভাবে স্থগিত করার জন্য ছয়জন প্রার্থী আবু হুরাইরা, নাজমুল হক, মুর্তজা বশি, একরামুল হক, বকুল হোসেন ও নিয়ামুল বাশির স্বাক্ষরিত একটি আবেদন ইউএনও অফিসে নিয়ে যায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেয়ার জন্য। এসময় ইউএনও অফিসে না থাকায় আ’লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এবং নিয়োগ প্রার্থীদের পক্ষ ও বিপক্ষ উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি, চেয়ার ছুড়ে ফেলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ, সাবেক এমপি ও বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। দুপুর সাড়ে ১২টায় বদলগাছী লাবণ্য প্রভা পাইলট ও কমিউনিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে জাহাঙ্গীর আলমসহ বাকী পাঁচজন প্রার্থী অংশে নেয়।বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে দুজন অত্র স্কুলের শিক্ষক। তারা পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ইউএনও অফিসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তবে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সহিত হয়েছে। কোন ধরনের অসদুপায় পন্থা অবলম্বন করা হয়নি।মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, ইউএনও অফিসে দুইপক্ষ অবস্থান করছিল। সাময়িক ভাবে পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য একটি পক্ষ দরখাস্ত দিতে চেয়েছিল। দরখাস্তটি নিয়ে আমি তাদেরকে আমার অফিসে যেতে বলি। এতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে পরীক্ষা বাতিল এবং নিয়োগ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটিকে সীদ্ধান্ত নিতে হবে।ডিজি প্রতিনিধি নাসরিন বানু বলেন, যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইনি মূলত তারাই ঝামেলা সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ প্রশাসন এসে আমাদেরকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছতার সহিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুম আলী বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে অফিসে এসে হৈচৈ, মারামারি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় কিছু আসবাবপত্র পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনায় থানায় একটি এজাহার দায়ের হয়েছে।বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি-তদন্ত) শাহিনুর রহমান বলেন, ইউএনও অফিসে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় থানায় একটি এজাহার হয়েছে।উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও একই পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে নিয়োগ পরীক্ষার পরেও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।