বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির আরও দুই সাবেক পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, বেসিক ব্যাংক পরিচালনা পর্যদের সাবেক পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও আনিস আহমদকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রনব বলেন, দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খানের নেতৃত্বে একটি দল ওই দুজই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।ঋণ কেলেঙ্কারির ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল।অন্য আটজন হলেন- কামরুন নাহার আহমেদ, অধ্যাপক কাজী আকতার হোসাইন, সাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, একেএম কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, শ্যাম সুন্দর শিকদার ও একেএম রেজাউর রহমান।দুদকের এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে গত ২২ নভেম্বর থেকে। সোমবার ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচচুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।বাচচুকে সোমবার সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে কমিশন থেকে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রনব।২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।

ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।তবে আসামির তালিকায় বাচচু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের ওই তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।এ বিষয়ে দুদকের বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচচুর সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। তাই তার নাম আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।

কিন্তু গতবছর ফেব্রুয়ারিতে সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচচুর সংশ্লিষ্টতা ছিল।আর চলতি বছর অগাস্টে এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাচচু ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে।ব্যক্তি যেই হোক না কেন- এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ যেন না হয় সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সে সময় সতর্ক করে আদালত।এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে দুদকের একজন পরিচালক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আসামির তালিকায় নাম না থাকলেও তদন্তের প্রয়োজনে বাচচুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচচুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়।

কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচচু পদত্যাগ করেন।অর্থমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, পদত্যাগ করলেই পার পাবেন না বাচচু। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।