(ধারাবাহিক পূর্ব প্রকাশের পর)

হৈ চৈ এর মধ্যে কাজী ভাইয়ের আর ভাল লাগছে না। হাজার হলেও লেখক-সাংবাদিক মানুষ, মাথার মধ্যে তার অনেক চিন্তা। কাজী ভাইয়ের মাথায় অনেক কিছু ঘুর-পাক খায়, মানে হঠাৎ করে তিনি কোথায় যেন হারিয়ে যান, ভুলে যান আশে-পাশে কি হচ্ছে, যাকে বলে কল্পনায় অবগাহন। সেই ভয়ে তিনি গাড়ি চালাতেন না ঢাকায়, গুলশানই তাকে নিয়ে যেত প্রায় সময় এখানে-ওখানে বেড়াতে। কি জানি কি চিন্তা করেন, আর কাউকে চাপা দিয়ে বসেন।
কাজীঃ নট ভাই, চলেন একটু বেলকনিতে যাই।
মিঃ নটঃ কেন?
কাজীঃ একটু বিড়ি ফুকাইতাম…।
মিঃ নটঃ বিড়ি? মানে আকিজ বিড়ি?
কাজীঃ আরে নাহ্‌…নট ভাই…এই বিড়ি হল বেন্সন এন্ড হেজেজ……
মিঃ নটঃ তো বিড়ি বলেন কেন?
কাজীঃ জানেন, বিক্রেতারা ঐ নামে ডাকে……কোথা থেকে যেন ওরা সস্তায় আনে।।আর আমার কাছেও সস্তায় বেচে……এই নেন, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছি…।।
মিঃ নটঃ অসম্ভব!! ২০০৩ সালের ২২ অক্টোবর আমার ৪-ভেসেল করনারী বাইপাস হয়েছে…।বক্ষ বিদীর্ণ করে……।সেই থেকে ডাক্তারের নিষেধ, একটি দন্ডও ধরিনি……প্রকৌশলের ছাত্র থাকতে দু’ একটা খেতাম…বিশেষ করে পরীক্ষার আগের রাতে ‘নাইট-ফাইট’ দেয়ার সময়……।
কাজীঃ আচ্ছা, নট ভাই, আমি একটা ধরাচ্ছি……জানেন, আমি যখন সিগারেট ধরাই, আর একটা গভীর টান দেই (শুক টান), তখন আমার মনে হয় যেন মাথা থেকে চিন্তার বিকিরণ ঘটছে, ঠিক যেন আলবার্ট আইন্সটাইনের মত……
মিঃ নটঃ তাই নাকি, …বেশ তো…আচ্ছা, কাজী ভাই, আপনি তো গণতন্ত্র নিয়ে অনেক লেখা-লেখি করেন, জোর-কন্ঠে বলাবলিও করেন……একটা কথা চিন্তা করেছেন কি?
কাজীঃ কি, নট ভাই, কি বলতে চান, বলুন তো?
মিঃ নটঃ ভেবে দেখেছেন কি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মডেলটা কেমন হওয়া উচিৎ?
কাজীঃ মানে স্থপতিগণ যেমন স্থাপনার মডেল তৈরী করেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে গণতান্ত্রিক মডেলটাও সেই রকম হবে আর কি…। আপনিই বলেন…।
মিঃ নটঃ কেন, আব্রাহাম লিংকনের সেই মডেল, ‘……অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল………’
(এর মাঝে কখন যে গুলশান আর সিমি ভাবী এসে মিঃ নটের পাশে এসে বসেছে তা তিনি বলতে পারেন না)
সিমিঃ হ্যাঁ, তাইতো দেখছি আমি এখানে, প্রবাসী বাঙ্গালী-আমেরিকান লোকসমাজের একজন সংগঠক হিসেবে। মানুষ নিজেরা নিজেদের দ্বারাই শাসিত হচ্ছে। আর এটাই তো গণতন্ত্রের মূল কথা।
মিঃ নটঃ আপনি ঠিক বলেছেন, সিমি ভাবী। তবে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে গণতন্ত্রের ধরণ কিন্তু ভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ আকারে ভিন্নতা। স্থানীয় সরকারের ছোট্ট একটা শহরে কয়েক ডজন লোক এই ধারণাটির চর্চা করতে পারে। আবার লক্ষ লক্ষ মানুষের জনপ্রতিনিধি দ্বারাও পুরো দেশের সরকার ও আইন পরিষদ পরিচালিত হতে পারে এ ধারণার ভিত্তিতে। হতে পারে প্রজাতন্ত্র, হতে পারে সীমিত বা আলংকারিক রাজতন্ত্র। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ হ’ল প্রজাতন্ত্র। আবার, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, স্পেন ইত্যাদি দেশে সীমিত অথবা আলংকারিক রাজতন্ত্রের সাথে গণতন্ত্রের সহাবস্থানও আছে।
সিমিঃ তাহলে কি আমরা ঐ রকম রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো? যেমনঃ আমাদের বঙ্গবন্ধুকে তো ঐ রকম আলংকারিক পদে বসানো যেত। তাহলে তো তাদের পরিবার ঐ রকম ধারাবাহিকভাবে চলতো…। আর সেই ভীষণ দুখজনক ঘটনা এড়ানো যেত।
মিঃ নটঃ হ্যাঁ, যেত। জনগণ চাইলে কি না হয়। তবে সিমি ভাবী, আমি ওগুলোতে বিশ্বাস করি না। কেন জানেন? কারণ, মানুষ হিসেবে সবাই সমান, ধর্মের কথাও তাই। একজন যাবে, আর একজন আসবে, তাই না? যেখানে সীমিত অথবা আলংকারিক রাজতন্ত্রের ব্যবস্থা নেই, সেখানে তো যাওয়া–আসা চলে। চলে যাওয়ার পর তারা অন্য কিছু করে, পূর্বসুরী হিসেবে রাষ্ট্রের যথাযথ সম্মান-সম্মানিও পায় তারা। তারা তো পদ আঁকড়ে ধরে থাকে না, আর সে সুযোগ তাদের সংবিধানে নেই। যেমনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আরও একটা কারণ হ’ল এ ধরনের আলংকারিক রাজতন্ত্রের জন্যে জনগণের অনেক অর্থের খরচ হয়। বাংলাদেশ তো একটা দরিদ্র দেশ, সবে মাত্র পাখা মেলতে শুরু করেছে……খরচের বোঝা বাড়িয়ে লাভ কি বলেন? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ঐ অর্থ খরচ করা যেতে পারে, দুঃস্থ মানুষের সেবায়, তাই না?
গুলশানঃ আর কোন ভিন্নতা কি হতে পারে গণতন্ত্রে?
মিঃ নটঃ হতে পারে, গুলশান। যেমন ধর, কিভাবে গণমানুষের কন্ঠ প্রতিধ্বনিত হবে তা একেক দেশে একেক প্রকার হতে পারে। তাছাড়া, মানুষের ইচ্ছের প্রতিফলন বা বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তার প্রকারও ভিন্ন হতে পারে।
(ড্রয়িং রুম থেকে বেলকনিতে ইমরুলের ডাক……দেখে যা, ধীর-চিত্রে, কিভাবে মাহমুদু অল্পের জন্যে রান-আউট থেকে বেচে গেল……)
কাজীঃ নট ভাই, চলেন চা খেয়ে আসি……আর এক চাপ……
গুলশানঃ কিন্তু ধর্ম বা ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টি কিভাবে হবে তা তো বললেন না, নট ভাই !
মিঃ নটঃ সেটাও বলছি একটু পরে, আগে ইমরুল কি বলছে শুনে আসি……।

(চলবে)

লেজুড়সমূহঃ কল্পনায় অবগাহন, ৪-ভেসেল করনারী বাইপাস, চিন্তার বিকিরণ, গণতন্ত্র নিয়ে লেখা-লেখি, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে গণতান্ত্রিক মডেল, আব্রাহাম লিংকনের গণতান্ত্রিক মডেলের সংজ্ঞা ‘……অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল………’, প্রবাসী বাঙ্গালী-আমেরিকান লোকসমাজ, গণতন্ত্রে মানুষ নিজেরা নিজেদের দ্বারাই শাসিত হয়, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে গণতন্ত্রের ধরণ ভিন্ন হতে পারে, সীমিত বা আলংকারিক রাজতন্ত্র, মানুষ হিসেবে সবাই সমান, আলংকারিক রাজতন্ত্রের জন্যে জনগণের অনেক অর্থ খরচ হয়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত।

[দায়িত্ব পরিত্যাগঃ প্রিয় পাঠক/সদস্য মনে রাখুন: এ লেখার চরিত্রগুলো কাল্পনিক। বাস্তবে এই চরিত্রগুলোর কোনও অস্তিত্ত্ব নেই। তাছাড়া, প্রধান চরিত্র মিঃ নট মূলত একটি শক্ত ও জটিল গ্রন্থির বিমূর্তকরণ মাত্র যার বিচরণক্ষেত্র তামাম দুনিয়াব্যাপী। তবে এই চরিত্রগুলোর আলাপচারিতায় বা তার বিশ্লেষণে যা বের হয়ে এসেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সত্য এবং তা বাস্তবতার নিরিখে পাঠকের সক্রিয় বিবেচনার দাবী রাখে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আবার চরিত্রগুলোর আলাপচারিতায় ও প্রতিটি ঘটনায় বা দৃশ্যে কো্ন না কো্ন একটি সমস্যার (ছোট কিংবা বড় যাই হোক) বর্ণনা, ব্যাপ্তি, বিশ্লেষণ এবং সম্ভাব্যক্ষেত্রে তার সমাধানের ইঙ্গিত করা হয়েছে। এতে কারো কোনো দ্বিমত, ভিন্নমত, মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তা লেখককে ই-মেইলে বা ফেসবুকে অনুগ্রহপূর্বক অবহিত করতে পারেন। ই-মেইল ঠিকানাঃ khandkera0565@gmail.com । কেউ চাইলে ফেস বুক বা স্ক্যাইপেও লেখকের সাথে যুক্ত হতে পারেন। স্ক্যাইপ আই ডিঃ Khandker.ahmed898 । যেহেতু চরিত্রগুলো কাল্পনিক, তাই বর্ণনা ও বিশ্লেষণ যাই হোক না কেন, তাতে কোনো ব্যক্তি বা পক্ষের সংক্ষুব্ধ হবার কোনোই কারণ নেই। ব্যাখা-বিশ্লেষণগুলোকে তাই শুধুই জ্ঞান-চর্চা বা গবেষণামূলক বিষয় হিসেবে দেখার জন্য সম্মানিত পাঠকবৃন্দকে/সদস্যবৃন্দকে অনুরোধ করছি।ধন্যবাদ। খন্দকার হাবীব আহ্‌মেদ, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬ নিউ ইয়র্ক।]

খন্দকার হাবীব আহ্‌মেদ
(লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত)