জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজই জানাবেন বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের বিষয়টিও জানাবেন তিনি। মঙ্গলবার ট্রাম্প নিজে ফোন করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এ বিষয়ে জানান। স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি তা পুরো বিশ্বের জন্যও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে বলে ট্রাম্পকে সতর্ক করেন আব্বাস। দূতাবাস স্থানান্তরের ফল ভাল হবে না বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লিগ, সৌদি আরব, জর্ডান, তুরস্ক, ফ্রান্স এবং জার্মানি।

বহু বছর ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এবার ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপন কিংবা ফিলিস্তিনিদের ছুরি হাতে হামলা নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার ঘোষণায় আলোচনার ঝড় উঠেছে।

মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগের মধ্যেই মঙ্গলবার তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের বিষয়টি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পুনরায় উত্থাপন করেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট দফতরের মুখপাত্র নাবিল আবু রাদিয়ানা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মাহমুদ আব্বাস জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বিশ্বের জন্যও মারাত্মক বিপদজনক হবে বলে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লিগ, জর্ডান, তুরস্ক, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সৌদি আরব। এতে করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘মহাসচিব বরাবরই সতর্ক করে বলেছেন বিভিন্ন পক্ষের হস্তক্ষেপ ইসরাইল ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী দু’দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনাই সংকট সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায়।’

একই কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জেরুজালেমকে রাজধানী করার বিষয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেন তিনি।

মোঘেরিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে ঐ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় দ্বিরাষ্ট্র প্রস্তাবের বাস্তবায়ন। আমরা বিশ্বাস করি শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করে এমন যে কোন পদক্ষেপ এড়িয়ে চলা উচিত।’

আরব লীগও ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যা জেরুজালেমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। আহমেদ আবু আল ঘেইত বলেন, ‘জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে তা যুক্তরাষ্ট্রের ভেবে দেখা উচিত। এ পদক্ষেপের ফলে শুধু ফিলিস্তিন নয় পুরো মুসলিম বিশ্ব এবং আরব দেশগুলোতেও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হবে।’

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি দিয়েছেন। ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল্ আবাদি সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে দেবে।

আন্তর্জাতিক মহলের এসব হুশিঁয়ারি ট্রাম্প আমলে নেবেন কিনা তা বুধবারই জানতে পারবে বিশ্ব। বুধবারই এ বিষয়ে ট্রাম্প তার অবস্থান জানাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স। জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ইস্যুতে ক্ষোভ বাড়তে থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের জেরুজালেম ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।