বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নাই, পরিকল্পনাও নাই। আমি বলেছি- একমাস পর নির্বাচন হলেও আমরা প্রস্তুত। এটা শুধু তাই নয়, একমাস, তিনমাস ছয়মাস যখনই নির্বাচন হয়, তখনই আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত আছি। তবে আমরা চাই বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হোক।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছি। এরই মধ্যে আমরা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রার্থীর খসড়া তালিকা তৈরি করে ফেলেছি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যখনই নির্বাচন দেবে, আমরা তখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ীই হবে। এ নিয়ে কারও পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করার কিছু নেই। মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আইন আছে। কমিশন সে আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করবে। এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বলছে একটা লোক মারা যাওয়ার পরপরই নির্বাচন করছে সরকার। নির্বাচন তো হতে হবে। তারা (বিএনপি) হয়তো প্রস্তুত নয়। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তারা আসেনি, নির্বাচন তো থেমে থাকেনি, থাকবেও না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা সহিংসতা করলে সরকার তা কঠোরভাবে দমন করবে বলে সাফ জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় মঙ্গলবার সচিবালয় এলাকায় গাড়ি ভাংচুর ও সড়কে অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বিএনপি ফের সহিংসতার দিকে যাচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কাদের বলেন, বিএনপি রাজপথে ফের সহিংসতা শুরু করলে সে অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।পরিস্থিতি যে রকম রূপ নেবে… একটা কথা আছে না, যেমন কুকুর তেমন মুগুর’; পরিস্থিতি যেভাবে দৃশ্যমান হবে জবাবটাও সে রকম হবে।

ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আবার রাজপথে ভাংচুর শুরু হয়েছে; এবং বিএনপি আবার এই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা সহিংসতার দিকেও যেতে পারে।এখন পুলিশের ওপর দোষ দিচ্ছে, পুলিশকে উসকানি তারা কেন দিল? আদালতে গেলেও তারা গোলমাল পাকায়, নিজেরা নিজেদের সঙ্গে হাতাহাতি করে, মারামারি করে। গতকাল (মঙ্গলবার) তারা রাস্তায় অবরোধ করতে গেছে, পুলিশ তো বাঁধা দেবেই।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ভোট ঠেকাতে বিএনপির আন্দোলনের সময়ে যে সহিংতা হয়েছিল, দলটি আবার সেই চর্চা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেন সেতুমন্ত্রী।

কাদের বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে- পুলিশের মোটরসাইকেল পোড়ালেন, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, জনগণের কী অপরাধ- যাদের গাড়ি ভাংচুর হল? বিএনপি কেন এই প্র্যাকটিসটা আবার শুরু করেছে? বাস পোড়ানো, গাড়ি পোড়ানো, ভাংচুর- এটা কি আবারও সেই অশনি সংকেত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা তারা শুরু করেছিল।

আন্দোলন করতে না পেরে বিএনপি আবারও সহিংসতার দিকেই যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।বার বার আদালতে নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার পরেও জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। কাজেই তারা বিকল্প হিসেবে সহিংসতার দিকে যেতে পারে, এটা অনুমান করা তো মিথ্যে নয়। তার ইন্ডিকেশন তো গতকাল আমরা দেখলাম।বিএনপি নেতাকর্মীরা সহিংসতা চালিয়ে কেন রাস্তায় কয়েক ডজন গাড়ি ভাংচুর করেছে এবং বিএনপি আবারও সহিংসতা দিকে যাচ্ছে কি না- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে সেই প্রশ্ন রাখেন কাদের।সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলছেন, আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা তাদের নেই।আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাও নেই, পরিকল্পনাও নেই। আমি বলেছি, নির্বাচন যদি এক মাস বা তিন মাস পরেও হয় আমরা প্রস্তুত। তবে যথাযথ সময়ের আগে নির্বাচন হবে এমন কোনো পরিকল্পনা এখনও সরকারের নেই; এবং আমরা দলীয়ভাবেও সেই চিন্তাভাবনা করছি না।কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমরা প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিতে শুরু করেছি। এখন আমাদের নির্বাচনের জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

বিএনপি এখনও সহায়ক সরকারের দাবি তুলছে, দলটি নির্বাচনে আসবে কি না- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি তো বলেছে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আসবে।ষোড়শ সংশোধনীর রায় কি সরকার দিয়ে দিল, তখন বিচার বিভাগ স্বাধীন। ন্যায় বিচার কাকে বলে? খালেদা জিয়ার সাজা হলে ন্যায় বিচার পাবে না। সাজা না হলে বিচার বিভাগ স্বাধীন। এটাই তো তাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সংজ্ঞা।খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচনের বাইরে রাখার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই জানিয়ে কাদের বলেন, (এই পরিকল্পনা আছে কি না) এটা আদালতকে জিজ্ঞেসা করতে বলুন। বিচার বিভাগ স্বাধীন, আদালতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সরকার করেনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাদের বলেন, এই মামলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আর মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করছি।