যশোরের বাঘারপাড়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যশোর আদালতে বাঘারপাড়া উপজেলার হুলিহট্ট গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু তাহেরের করা মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।মঙ্গলবার যশোর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাঘাপাড়া আমলি আদালতের বিচারক শাহাজান আলী মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।আসামিরা হলেন- হুলিহট্ট গ্রামের মৃত ওলিউল্লাহর ছেলে ফয়েজ আহম্মেদ, মৃত এলাহী বকশের ছেলে হাফিজুর রহমান, মৃত বরকতউল্লাহর ছেলে আব্দুল কাদের বাবু, নরসিংহপুর গ্রামের মৃত আলীম বিশ্বাসের ছেলে গাজী গহর আলী বিশ্বাস, পদ্মবিলা গ্রামের মৃত মীর মতিয়ার রহমানের ছেলে মীর আবু তাহের মুকুট এবং প্রেমচারা গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার দুই ছেলে- আমজাদ মোল্লা ও সবুর মোল্লা।মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঘারপাড়ার হুলিহট্ট, প্রেমচারা, নরসিংহপুর ও উত্তর চাঁদপুর গ্রামে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন আসামিরা। একাত্তরে ইব্রাহিম ডাক্তারের নেতৃত্বে খাজুরা বাজারে রাজাকার ক্যাম্প গঠন করা হয়। প্রেমচারা গ্রামের মোজাম বিশ্বাসের বাড়ির কাচারী ঘর ক্যাম্পের দফতর হিসেবে ব্যবহার হতো। এ ক্যাম্পের নেতৃত্ব দিতেন আমজাদ মোল্লা ও সবুর মোল্লা।আমজাদ মোল্লা হুলিহট্ট ও নরসিংহপুর গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে শান্তি কামিটি গঠন করেন, যার সেক্রেটারি ছিলেন হাজি গহর আলী বিশ্বাস।মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাজদ মোল্লা, ইব্রাহিম ডাক্তার, ফয়েজ আহম্মেদ মীর আবু তাহের মকুট, হাফিজুর রহমান, আব্দুল কাদের বাবু ও হাজী গহর আলী বিশ্বাসের নেতৃত্বে হত্যা, গুম, নির্যাতন, লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রেমচারা গ্রামের নুর হোসেন দফাদারের ছেলে নওশের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় তার মা ফুলজান বিবিকে রাজাকার কমান্ডর মজিদ ও ওহাব গুলি করে হত্যা করে।এছাড়া অভিযুক্তরা এলাকার আবু তাহের, নওয়াব আলী মন্ডল, সুরমান মন্ডল, ওয়াজেদ আলী মন্ডল, আছুফ আলী সরদারের বাড়িতে হানা দিয়ে মালামাল লুটপাট করে। পরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টাও চালায়।বরিশাল থেকে আসা কয়েক নারী-পুরুষ ভারতে যাওয়ার সময় চতুরবাড়ির বাজারে অবস্থান নেয়। এ সংবাদ পেয়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ওলিউল্লাহ ও তার ছেলে ফয়েজ আহম্মেদসহ অন্যরা ১২ নারীকে অপহরণ করে। পরে তাদের খাজুরা বাজারের রাজাকার ক্যাম্পের ইনচার্জ ইব্রাহিম ডাক্তারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়ায় যায়নি।মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের পর এসব রাজাকাররা বিভিন্ন রাজনীতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এলাকার প্রভাবশালী হয়ে উঠে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সুযোগ পাননি।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিলে এ মামলা করা হয়েছে।