সাগর মোহনার কাউয়ারচর মৌজার প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খাল দখল করে মাছের ঘের করা হয়েছে। সাগরের সঙ্গে সংযোগ খালটি বাঁধ দেয়ায় সেখানকার দুই শতাধিক জেলে পরিবারের দূর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হারিয়েছে। বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সরকারি খালসহ শত একর খাস জমি। এমনকি বনবিভাগের বিভিন্ন প্রজাতির বনায়ন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান হাওলাদার তার লোকজন নিয়ে এখালটি বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করা পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি সরকারি জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বাঁধ দেয়ায় বাধা দেয়ায় মাহবুবুর রহমানের ছেলেদের মারধরের শিকার হয়েছে দুই জেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের সেখানকার তহশীলদারের যোগসাজশ রয়েছে এই দখলে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীর দাবি সরকারি দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে এই দখল প্রক্রিয়ায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউয়ার চরের প্রাকৃতিক দৃশ্যে ঘেরা সাগরের পারে বহু আগেই এই চরটি জেগে ওঠে। যেখানে শত শত একর জমিতে ঝাউ ও আকাশমনি গাছের বাগান করা হয়েছে। এই বাগানের পাশে সৈকতে যেতে চরের মাঝ বরাবর একটি দীর্ঘ খাল রয়েছে। সাগরের সঙ্গে ওই খালের রয়েছে জেলেদের ট্রলার চলাচলের সংযোগ। দূর্যোগকালীন আশ্রয় ছাড়াও মাছ শিকার শেষে ওখানকার জেলে পরিবারগুলো ওই খাল দিয়ে চরের বাড়ি-ঘরে আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু হোগলার চর বরারর খালটিতে বীচে যাওয়ার অজুহাত সৃষ্টি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন তার তিন ছেলে সোহেল, বাহাদুর ও জুয়েল লোকজন নিয়ে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে। ঘেরের পাহারাদার থাকার জন্য একটি ঘর তোলার কাজ চলছে। জানা গেল, খালটির পানির প্রবাহ বন্ধে এবং দখলে বাধা দেয়া তাদের মারধরে আহত হয় দুই জেলে। বর্তমানে বাঁধের অভ্যন্তরে জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ নেই। প্রায় তিন শ’ একর ফসলী জমি রয়েছে। দুই শতাধিক জেলে পরিবারের জেলে নৌকা-ট্রলার নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলে ইলিয়াস, সুমন জানায় তাঁদের প্রায় তিন শ’ জেলে পরিবারকে এখন জিম্মি দশায় রাখা হয়েছে।

সাগর থেকে মাছ ধরে বাড়ি-ঘর পর্যন্ত যেতে পারছেনা। দূর্যোগ ঝুঁকিতে তারা আশ্রয়স্থল ( পোতাশ্রয়) হারিয়েছেন। এছাড়া সরকারের প্রায় ১০-১৫ একর জমি দখল করে চাষাবাদ করছে ওই মহলটি। চরের অধিকাংশ বাসিন্দারা জানান, এই খালটি আটকে দেয়ায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো মাছও তারা ধরতে পারবেন না। দীর্ঘ খালের পাশাপাশি বেদখল হয়ে গেছে শত একর খাস জমি। জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে বনবিভাগের বাগানের গাছপালা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে ওই খালটি দখল করা হলেও বনবিভাগ কিংবা ভূমি প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়রা আরও জানান ওই খালের আগে আরও একটি দীর্ঘ খাল দখল করে একই চক্র মাছের ঘের করে লাখ লাখ টাকার ফায়দা নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ মাছ শিকারের সুযোগ পাচ্ছে না। কেউ বাধা দিলে তাদের মারধরসহ নানান হুমকি দেয়া অব্যাহত রয়েছে। বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা মোঃ হারুন জানান, ওই বাঁধটি কেটে দেয়া হোক এটা আমিও চাই। তবে আপাতত বনবিভাগের গাছপালার ক্ষতির কোন কারন নেই। তবে ভবিষ্যতে বনায়ন করার জায়গা বেহাতের শঙ্কা রয়েছে বলে তাদের এই দখলকাজে কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান। আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান হাওলাদার জানান, খাল দখলের জন্য নয়- পর্যটকসহ সাধারন চরবাসীর চলাচলের জন্য নিজের অর্থায়নে বাঁধটি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পানি চলাচলের জন্য ওই স্পটে কালভার্ট করে দেয়া হবে। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তিনি এটি করেছেন বলে তার দাবি। এছাড়া উপজেলা ভূমি প্রশাসনের অনুমতির প্রক্রিয়া চলছে। আর মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিধিমতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।