আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমা তো বিএনপিকে চাইতে হবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রমাণ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের দুর্নীতির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।ওই সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে জন্য ক্ষমা না চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরের আদালতে বিএনপির দুর্নীতির বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, তারপরও তারা কোনো দিন জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। এগুলো কী করে অস্বীকার করবে বিএনপি? তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব, আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যে বিষয়টি এনেছেন, সেটা কখনো কখনো মনে হয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। আবার কখনো কখনো মনে হয় সত্যকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছেন। অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন,‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সত্য বলার সৎ সাহস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া শেখ হাসিনা কোনো কথা বলেননি। তিনি যা বলেছেন, জেনেশুনেই বলেছেন এবং এর তথ্য-প্রমাণ আছে বলেই বলেছেন।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিয়া পরিবার বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে যে অর্থ সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ পাচার করেছে, এগুলোর তদন্ত হবে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সত্য যতই অপ্রিয় হোক, যতই কঠিন হোকÑসত্যের বন্যা অপ্রতিরোধ্য। যে সত্য দিবালোকের মতো পরিষ্কার, তা চাপা দিয়ে কারও কোনো লাভ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা বাংলাদেশে সর্বজন স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের বাইরেও তাঁর সততা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সর্বশেষ ১৭৩টি দেশের মধ্যে সেরা সৎ ব্যক্তির মধ্যে শেখ হাসিনার নাম আসার পর থেকে বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে একটি মহলের গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। তারা তাদের মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড নতুনভাবে বাজানো শুরু করেছে।সড়ক ও সেতুমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘আমি বিএনপির মহাসচিবকে বলব, আপনি যেভাবে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে খ-ন করতে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, এটাই আপনাদের আসল চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও বলেন, এখন তো তারা বুঝে ফেলেছে ইতিমধ্যে দুর্নীতির মামলা ঝুলছে, আরও দুর্নীতির মামলা আসছে। নির্বাচন সামনে থাকায় তারা এখন হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই এখন আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে। পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না। অপরাধ করলে তার বিচার হবেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেল প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছেন তা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে না পারলে বিএনপির বিরুদ্ধেও মামলা করবো। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মন্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় বিএনপি। ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। তার জবাবেই এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ১২টি দেশে খালেদা জিয়া ও তার স্বজনদের বিনিয়োগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।তিনি বলেন, সৌদি আরবে শপিং মল ও কাতারে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো ও খালেদার ভাই শামীম ইস্কান্দার ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এই খবর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এসেছে। বাংলাদেশি পত্রপত্রিকাও এই খবর প্রচার করেছে।এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের আহ্বান জানাই।তিনি বলেন, কানাডিয়ান টেলিভিশনের খবরের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অকপটে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা যা বলেছেন জেনেশুনে বলেছেন। তথ্য প্রমাণ আছে বলেই বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য খন্ডন করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরেক সংবাদ সম্মেলনে যে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন সেটাই বিএনপির চরিত্রের আসল বহিঃপ্রকাশ। মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্য কখনও কখনও মনে হয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা, কখনও মনে হয় সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, কখনও মনে হয় অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার চেষ্টা। ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছেন। সত্য বলার সৎ সাহস শেখ হাসিনার আছে, তাই তিনি অকপটে সত্য কথা বলেছেন।আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, সৌদি আরবের বর্তমান প্রিন্স দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। সেখানে ১১ জন প্রিন্স অভিযুক্ত ও কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বলেছেন, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, শামীম ইস্কান্দার ব্যবসায়িক কাজে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। সৌদি আরব, কাতারসহ ১২টি দেশে তারা বিনিয়োগ করেছেন। এই খবরে বিএনপির কেন গাত্রদাহ। দুদকের প্রতি আহ্বান জানাই, তদন্ত করে সঠিক তথ্য বের করে এত বড় কেলেঙ্কারি বিচারের আওতায় আনা হোক। দুদকে গিয়ে প্রমাণ করুন আপনারা (বিএনপি) নির্দোষ।তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশ্নের অবতারণা করেছেন সেটা আপনারা প্রমাণ করুন। দুর্নীতি করলে আদালতে আসতে হবে, বিচারের আওতায় আসতে হবে। ইতোমধ্যে দুদক তদন্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিএনপির দুর্নীতি প্রমাণিত, আর প্রমাণের প্রয়োজন নেই।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।