বিএনপি সরকারের সময়দেশে উৎপাদন হতো এক হাজার ৬০০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর এখনহচ্ছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট।রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প ও চারটিবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথাবলেন।তিনি বলেন, বিএনপির সময় দেশে বিদ্যুৎ ছিল না, রাজধানীরঅনেক এলাকা অন্ধকারে ছিল। আমরা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ নিয়ে যাত্রা করেছিলাম, এখন ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎউৎপাদন করছি। আশাকরি দেশের মানুষ তা মনে রাখবেন। শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প উন্নয়নসহ যে কাজই করতে যাই বিদ্যুৎপ্রয়োজন। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল কত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেপারি। আমাদের লক্ষ্য ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। দুর্গমএলাকায়ও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। এখনগ্রামে বসে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছি। মানুষের জীবন সুন্দর ওসহজ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় এসেআমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো, মানুষকেসুশিক্ষায় শিক্ষিত করবো। প্রতিটি অঞ্চল উন্নত করবো এবং সুষমবণ্টন নিশ্চিত করবো। আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, ঘুষ,অত্যাচার, নির্যাতন ছিল বিএনপির কাজ। তাদের কাছে ক্ষমতামানেই ভোগ বিলাসে গা ভাসানো। ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশকেপাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান বানিয়েছিল। জঙ্গিবাদ ও বাংলাভাইয়ের সৃষ্টি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারনির্যাতন, আমার ওপর গ্রেনেড হামলাই ছিল তাদের কাজ। মানুষেরউন্নয়নে তারা কোনও কাজ করেনি। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দেশে

প্রথম সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ এখন যোগ হচ্ছে জাতীয়গ্রিডে।তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশিসুনামগঞ্জে ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি ফটোভোল্টাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ৩২৫ মেগাওয়াটক্ষমতার আরও দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সুষম উন্নয়নেবিশ্বাসী। এ কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন করছে।সরিষাবাড়ীর সিমলা বাজারে দেশের প্রথম সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটিনির্মাণ করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে।এনগ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্ল্যান্ট লিমিটেড’ নামের এইকেন্দ্রে জমি দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর বিনিয়োগকরেছে জার্মানির আইএফই এরিকসেন এজি, বাংলাদেশের কনকর্ডপ্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জিলিমিটেড।আট একর জমিতে সাড়ে ১১ হাজার সোলার প্যানেলব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে তিন মেগাওয়াটের এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র।আগামী এক বছরের মধ্যে এরকম আরও পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ৩৩২মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।সুনামগঞ্জের সাল্লায় ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ফটোভোল্টাইকবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়েছে দুই হাজার ৩২২টি সোলারপ্যানেল। এই কেন্দ্রের ফলে হাওরের ৪০০ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, ভবিষ্যতে সোলার বিদ্যুতের উৎপাদিতঅতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে আসবে।চট্টগ্রামের পটিয়ায়শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগ্যাস টারবাইনে ১৫০ এবং স্টিম টারবাইনে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎতৈরি হবে।আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরার ঝিলিম বাজারে চালু হওয়া নতুনবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।এ অনুষ্ঠানেরমাধ্যমে ফরিদপুর সদর উপজেলা, মাদারীপুরের রাজৈর, নওগাঁ সদর,সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সদর, মাগুরারশালিখা, মেহেরপুর সদর, নেত্রকোণার মদন এবং নরসিংদীর বেলাবউপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব আহমদ কায়কাউস এসরকারের সময়ে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।২০০৯সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ

উৎপাদন ক্ষমতা তখন ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট; গ্রাহক ছিলএক কোটি আট লাখ।সেই উৎপাদন ক্ষমতা এখন বেড়ে ১৬ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট হয়েছে।আর গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে বলে জানানআহমদ কায়কাউস। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আট বছরে বিদ্যুৎউৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনাবলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুতের সমস্যাসমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।বিএনপি দিয়েছিল ১৬০০মেগাওয়াট। আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট।এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে ২৭টিবিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এখন ১১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয়গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে বিদ্যুৎউৎপাদন একান্ত অপরিহার্য। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল; কত দ্রুতবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।এর অংশ হিসেবে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজশুরু করা এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথাও শেখ হাসিনা বলেন।তিনি বলেন, ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই জনগণের জন্যকাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমরা চাই, মানুষ যেন উন্নত জীবনপায়। সেজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।ৃ আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গেদেশের উন্নয়ন যে সম্ভব; তা আমরা প্রমাণ করেছি।উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার পর প্রধানমন্ত্রী সংশিষ্ট জেলাগুলোরকর্মকর্তা এবং স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে কথাবলেন। নেত্রকোণায় শিক্ষিকা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেপ্রধানমন্ত্রী হাওড় অঞ্চলে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপকরেন।অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশে সৌদি আরবেররাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল-মুতাইরি এবং বাংলাদেশেকুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এএইচ হায়াৎ উপস্থিত ছিলেনগণভবনের এ অনুষ্ঠানে।