নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেন্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সেই বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উদযাপন করেছে সমগ্র জাতি। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার শপথ নিয়ে পালিত বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী উদযাপিত।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে যুক্ত হওয়ায় এ বছর বিজয় দিবসে নতুন মাত্রা যোগ হয়।সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিন¤্র শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সমবেত হয়। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি উদযাপন করে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে।

শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ ভোর থেকেই সাভারে স্মৃতিসৌধের বাইরে ও আশপাশের মহাসড়ক এলাকা এবং ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে।ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্মৃতিসৌধে নেমেছিল জনতার এই ঢল। বিন¤্র শ্রদ্ধাবোনত চিত্তে সমগ্র জাতি ত্রিশ লাখ শহীদকে আরো একবার জানিয়ে দিল ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে শনিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখর ছিলো বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও ¯’াপনায় আলোকসজ্জার ব্যব¯’া হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।ফেনী ফেনীতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। সকাল সাড়ে ৬টা ৩৫ মিনিটে শহরের জেল রোড়স্থ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মৃতিস্তম্বে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্যে দিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়মুক্তিযুদ্ধ শহীদ স্মৃতিস্তম্বে ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ জাহানারা বেগম সুরমা, জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামীলীগ, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, জেলা বিএনপি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেস ক্লাব, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর পরিষদ, লায়ন ক্লাব, রোটারী ক্লাব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সংসদসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পন করেনসকাল সাড়ে ৮ টায় ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জমকালো বর্ণিল আয়োজনে শরীরচর্চা প্রদর্শনী করা হয়। কুচকাওয়াজ গ্রহন করেন জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার উক্য সিং। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এ কর্মসূচী। বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের সংবর্ধনা, সাড়ে ১১টায় ফেনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা পর্যায়ে মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়দুপর দেড়টায় হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান সমূহে উন্নত খাবার পরিবেশন, বিকাল তিনটায় ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামে প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা, ৪টায় প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যায় ৬ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত ও শহরের ট্রাংক রোড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এছাড়া জেলার প্রত্যেক মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাশনালয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী, জাতির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ-আত্মদানকারী- যুদ্ধাহতদের জন্য বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

যশোর : বিজয়স্তম্ভে পুষ্পস্তববক অর্পণ, কুচকাওয়াজসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যশোরে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। আজ শনিবার সকাল ৮টায় শহরের মণিহার এলাকাস্থ বিজয়স্তম্ভে ফুল দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ ও ত্যাগ স্বীকারকারীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে যশোরবাসী। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে বিজয়স্তম্ভে। এসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ পাঠ করা হয়। এরপর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে সকাল ৯টায় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সালাম গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, চলচিত্র প্রদর্শনীসহ দিনভর বিভিন্ন সংগঠনের নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ :যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহান বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিনের কর্মসূচীর সুচনা হয়। এর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলকে মুক্তিযোদ্ধ সংসদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রাশাসন সিটি প্রেসক্লাব চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন সংগঠনের পুস্পস্তবক অর্পণ এবং সকল সরকারি আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে পতাকা উত্তোলন করা হয়।সকাল সাড়ে ৮ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ষ্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান ও পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম। এসময় পুলিশ, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্ল গাইডস, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহন করেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলাদা আলাদা ভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা, র‌্যালী, চিত্রাংকন, দেশাত্মবোধক সংগীত ও রচনা প্রতিযোগীতাসহ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।

হাটহাজারী:হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপনের শুরুতে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,হাটহাজারী মডেল থানা, হাটহাজারী পৌরসভা, হাটহাজারী প্রেস ক্লাব, হাটহাজারী সাংবাদিক সমিতি, হাটহাজারী সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।

কুড়িগ্রাম:মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে কুড়িগ্রামে মহান বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। সুর্যোদয়ের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে দিবসের সুচনা হয়।পরে কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম মাঠে আনুষ্ঠানিক জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও মার্চ পাস্টের অভিভাদন গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান ও পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে শুরু হয়েছে ২দিন ব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী।কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বেইলিব্রীজে থ্রি-হুইলারের সাথে অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ মুক্তিযোদ্ধাসহ অটোচালক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সরকার (৭০) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার সকালে দুর্গাপুর থেকে উলিপুরে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু জানান, উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই, মাস্টারপাড়া, পাঁচপীর, যমুনা এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচপীর বাজার থেকে অটো নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে যাওয়ার সময় ওই এলাকার বেইলীব্রীজের কাছে এক অটো হুইলারের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ৮ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৯জন আহত হন। গুরুতর আহত মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর আহত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, দুর্গাপুর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মশিউর রহমান (৬২), আব্দুল জব্বার (৬৮), আলহাজ¦ রোস্তম আলী (৭০), সাইফুর রহমান বকসী (৬৪), ওসমান গণি (৬৫), আবু ইউসুফ সরকার (৭০), আব্দুস সাত্তার (৬৭),আব্দুর রহিম (৫৫) এবং অটোচালক আব্দুর রশীদ (২৭)। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আহতদের দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম সেলিম, সদর ইউএনও আমিন আল পারভেজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকুসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন লোকজন হাসপাতালে ছুটে যান।ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর সরদার শিপন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় ৯জন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরমধ্যে ৩জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও একজনকে রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। বর্তমানে অটোচালকসহ ৫জন হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মাদারীপুর: মাদারীপুরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি সহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৪৬তম মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ভোর ৬টা ১ মিনিটে পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়। এর পর থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ও সরকারী নাজিউদ্দিন কলেজের অঙ্গনস্থ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় আচমত আলীখান স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোঃ সরোয়ার হোসেন। সকাল ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সাথে জেলা প্রশাসক সৌজন্য সাক্ষাতকারে মিলিত হন। মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নোয়াখালী: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৪৬তম মহান বিজয় দিবস ২০১৭ উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর ২০১৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও ছাত্রসংগঠনসমূহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিবসটি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। এদিন সকাল ৯টায় নোবিপ্রবি পরিবারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সকলের অংশগ্রহণে বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মূলফটকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়কবৃন্দ, নোবিপ্রবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে শহিদ মিনার ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃেিত শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিছ অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, ইতিহাসের মহান নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার যোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমারা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এসময় উপাচার্য ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করেন। এছাড়া তিনি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পেছনে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, এ জনপদের স্বাধীনতা অর্জনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের ওই ঋণ পরিশোধে সকলকে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই এ বিজয় সার্থক হবে। বিজয়ের ৪৬ বছরে আজ একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নোবিপ্রবি হবে নকল, মাদক ও ড্রাগমুক্ত একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ছাত্র-শিক্ষক সকলকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত, সর্বোপরি এ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, বিজয় দিবসকে আনন্দমুখর করে তুলতে আজ দুপুরে ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, সন্ধ্যায় শিক্ষকবৃন্দের টিপিএল ফাইনাল ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।

সাতক্ষীরা: : মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে আবারও নির্মূল করার প্রত্যায় নিয়ে সাতক্ষীরায় নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হয়।এরপর সকালে সাতক্ষীরা ষ্টেডিয়ামে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পতাকা উত্তোলন, ছালাম গ্রহন, পুলিশ, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রর্দশনী, রক্তদান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়, পরে মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু প্রমুখ। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা দেয়া হয়।

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বিজয় র‌্যালি বের হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া এবং জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। সকালে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। সকালে শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। প্রথম প্রহরে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্ত্বরে কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনিসহ পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে কর্মসূচির শুরু হয়। জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান, পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসানসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।

মাগুরা: মাগুরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে মহান বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন জেলা পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমান ও জেলা জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান।

নরসিংদী: নরসিংদীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সকালে কালেক্টরেট ভবনের অভ্যন্তরে শহীদ স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করে নরসিংদীবাসী।

নাটোর: শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে নাটোরে পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। সকালে নাটোর শহরের মাদরাসা মোড়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল।

নওগাঁ: মহান বিজয় দিবসে নওগাঁর কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

রাঙামাটি: নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে রাঙামাটিতে মহান বিজয় দিবস পালন করা হচ্ছে। সকালে রাঙামাটি চিংহ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর কুচকাওয়াজ ও শিশু কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে।

টাঙ্গাইল: বিজয় দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলে স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা পেশাজীবী ও শ্রেণি পেশার মানুষ। সকাল সাড়ে ৭টায় টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে সর্বস্তরের মানুষ এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বান্দরবান: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে উদযাপিত হয়েছে ৪৬তম মহান বিজয় দিবস। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর ভোরে স্থানীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি।

বরিশাল: বিজয় দিবসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) বিজয় র‌্যালি করেছে। র‌্যালিটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের নেতৃত্বে বের হয়। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-পটুয়াখালী-ভোলা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ময়মনসিংহ: নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহে বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে নগরীর রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন ও পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি।