মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তি উদযাপনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির’ শপথ নিয়ে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি।জাতীয় পতাকা, নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন ও রঙিন বেলুন নিয়ে সোমবার বিকালে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।বিকাল ৩টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর হয়ে বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে মালিবাগের এসে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ছাড়াও জিয়াউর রহমানের স্মরণে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

এ কর্মসূচি সামনে রেখে দুপুর থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টন সড়কে সমবেত হতে শুরু করেন। বেলা আড়াইটার দিকে ফকিরাপুল থেকে নেতাকর্মীদের ভিড় কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত পৌঁছায়। শোভাযাত্রার অগ্রভাগ যখন মালিবাগের মোড়ে, তখনও শেষ ভাগ নয়া পল্টনের মোড় অতিক্রম করতে পারেনি। শোভাযাত্রা মোড় ঘুরে আবার পল্টনে দিকে চলে যায়।বিজয় শোভাযাত্রায় বিএনপির দলীয় পতাকার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে আসেন নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রার সামনের অংশে ছিল ঘোড়ার গাড়ি আর ব্যান্ড বাদকরা। অনেকে সেজেছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সাজে। শোভাযাত্রা শুরুর আগে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, কেবল একদলীয় শাসন প্রবর্তন করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে আজ এই সরকার পদদলিত করতে চায়।খালেদা জিয়া নয় বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়েছে। এই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। কারাগার ভেঙে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের এই দিনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আমরা করছি। বলতে চাই, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আবারও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাই।মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কখনও পদদলিত করে রাখা যাবে না, তাদের কখনও দাবিয়ে রাখা যাবে না। এদেশের মানুষ অতীতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। এবারও রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। আজকে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় র‌্যালির মাধ্যমে গণতন্ত্রে দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’তিনি আরও বলেন,আমরা গণতন্ত্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে। মানুষ মত-প্রকাশ করতে পারবে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে লিখতে পারবেন। এই ধরনের মুক্ত বাংলাদেশ চাই। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার শুধু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে সব ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে আমাদের পদদলিত করতে চায়।এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রমুখ। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির শোভাযাত্রা ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) ও একটি জলকামান মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। বিএনপি কার্যালয়ের উত্তর পাশের রাস্তায় ছিল আরও একটি এপিসি ও জলকামান।বিএনপির পার্টি অফিসের সামনের রাস্তায় দেখা যায় একটি প্রিজনভ্যান। রাস্তার উভয় পাশে পুলিশের সতর্ক অবস্থানও দেখা যায়। এছাড়া পল্টন থানা এলাকায় দেখা যায় র‌্যাবের একাধিক গাড়ি।বিজয় র‌্যালির সময় মোড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ রাখা হয়। তাছাড়া মিছিলের সামনে-পেছনেও পুলিশ ছিল বলে জানান পরিদর্শক শাহীদুজ্জামান।