গাজীপুরে এক পুলিশ সদস্যকে জিম্মি করে আপত্তিকর ছবি তুলে তা পত্রিকায় প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ও হতার হুমকি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে মানবাধিকার ও সাংবাদিক পরিচয়ধারী দুই নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা থানার বাড়াইপাড়া এলাকার সোলেমান গণির ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (২৪), শেরপুর সদরের সন্নাসীচর এলাকার ইসমাইল আলীর ছেলে মোঃ আইয়ুব আলী (২৮), জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার ঢালুয়া বাড়ি গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মোঃ এরশাদ আলী (২৮), একই থানার ঝাউপাড়া টোক্কারচর গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী রতœা বেগম (৪৫), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থানার বলিভদ্র গ্রামের মোঃ শাহজাহান আলীর ছেলে মাসুদ রানা (৩০), বরিশালের গৌরনদী থানার হোসনাবাদ গ্রামের মোঃ শাহ আলম সরকারের ছেলে মোঃ শামীম হোসেন (৪৫) ও গাইবান্দা জেলার সাঘাটা থানার বোনারপাড়া গ্রামের হামিদুলের মেয়ে রূপা বেগম (২০)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন ভোগড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কনস্টেবল মো. আমির হোসেনকে তার পূর্ব পরিচিত মোসা. শ্যামলা নামের এক মহিলা বুধবার কৌশলে স্থানীয় কাজিম উদ্দিন স্কুল রোডে শাহ আলমের বাড়ির একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে রূপা নামের অপর এক নারীর সঙ্গে কনস্টেবল আমির হোসেনের পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সেই কক্ষে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া পরিচয়ে সোহেল এবং সাংবাদিক পরিচয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫-৬জন লোক প্রবেশ করে। এসময় তারা খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল আমির ও রূপার একত্রে (গ্রুপ) ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশের এবং তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ও হত্যার হুমকি দিয়ে ৮০ হাজার টাকা দাবী করে দু’টি বিকাশ নম্বর দেয়। পরে তারা আমিরের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে কনস্টেবল আমির তার পরিচিত জাকির হোসেনকে ঘটনা অবগত করে তাকে বিকাশ নম্বর দুইটি দেয়। জাকিরের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে কনস্টেবল আমিরকে উদ্ধার ও সাতজনকে আটক করা হয়।

পুলিশ এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে আটাট মোবাইল ফোন সেট, একটি লেন্স ক্যামেরা, ১০টি মোবাইল সিম কার্ড, তিনটি ব্যাংকের অলিখিত চেক, লিখিত ও অলিখিত ১০টি স্ট্যাম্প, ছিনতাইকৃত ৫হাজার টাকাসহ দুইটি পরিচয়পত্র উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত পরিচয়পত্র দু’টির মধ্যে একটিতে ক্রাইম অ্যাকশনের মোবাইল করসপন্ডেন্ট হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের নাম এবং অন্যটিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যক্ষেণ পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে শামিম হোসেনের নাম লিখা রয়েছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত ও তাদের সহযোগীরা দীর্ঘ দিন যাবত গাজীপুরের টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা ও কোনাবাড়ি এলাকায় রাস্তা থেকে সাধারণ মানুষকে কৌশলে ধরে তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে আটকিয়ে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ টাকা পয়সা ও মোবাইল সেটসহ মূল্যবান জিনিষপত্র লুট করে আসছিল। দেশের বিভিন্ন অ ল থেকে এসব এলাকায় এসে গাড়ি থেকে নামা যাত্রীদেরকেও তারা জিম্মি করতো। পরে তারা ভিকটিমের বাড়িতে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে পরে ছেড়ে দিত।