মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নারীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক সুরক্ষা ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে ১১টি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ উইমেন্স হিউম্যানিটারিয়ান প্ল্যাটফর্ম। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।প্ল্যাটফর্মের সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে- আশ্রয়কেন্দ্রে নারী মাঝি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া; স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি, পয়ঃনিষ্কাশন, শিশু খাদ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া; পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ ও কর্মসূচি জোরদার; আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা; রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান; নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি; মনোসামাজিক পরামর্শ প্রদানের কার্যক্রমের ওপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ; ত্রাণকার্যে অধিক সংখ্যক নারী কর্মী অন্তর্ভুক্ত করা; মানবিক সহায়তা বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার; মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে শক্তিশালী দল তৈরি ও সমন্বয় সাধন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মানব সক্ষমতা উন্নয়নে জীবন দক্ষতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া।
সুলতানা কামাল বলেন, ক্যাম্প এলাকায় যারা কাজ করছেন তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ। তারা ব্যবস্থাপনায় খুবই দুর্বল। বিভিন্ন এনজিও থেকে কম দক্ষ কর্মীদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতে তাদের হেড অফিসে কথা বলতে হয়। কারণ তাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই।ক্যাম্প এলাকায় অবস্থানের সময় নিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পে ৫টার পর বাইরের কেউ থাকতে পারে না। তাই মেডিক্যাল ক্যাম্পে যারা থাকেন তাদেরও ক্যাম্প বন্ধ করে বের হয়ে যেতে হয়। ৫টার পর কেউ চিকিৎসা সেবা পায় না।ত্রাণ বিতরণের ধরণ নিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, শরণার্থীরা ত্রাণ পাচ্ছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, লবণ। কিন্তু অন্য খাবারের যেমন শাক-সবজি, মাছের জোগাড় করতে তারা শিশু খাদ্য বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে।মিয়ানমারে নির্যাতিত নারীরা একধরনের ট্রমার মধ্যে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে নারীরা যেই পরিমাণ শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছেন এরপর তারা কিভাবে ফেরত যেতে চাইবেন! ধর্ষনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা বেশিরভাগ সময়ই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকতো। তারা নিজেদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ চায়, যাকে আমরা বলি নাগরিক অধিকার। নাগরিক অধিকার পেলে তারা চলে যাবে।