নওগাঁয় ক্রমেই বাড়ছে দীর্ঘ মেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি গ্রহনের হার। গত দুই বছর আগেও যেখানে মাত্র ১৩ শতাংশ নারী এই পদ্ধতি গ্রহন করত সেখানে বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ নারী এখন এসব পদ্ধতি গ্রহন করছে। চিকিৎসকরা বলছেন নারীদের মধ্যেই ক্রমেই স্বচেতনা বাড়ছে তাই ইমপ্ল্যান্ট ও আইইউডিরমত দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতিগুলো গ্রহন করছেন নারীরা। সরেজমিনে জানাযায়, নওগাঁ সদর উপজেলার শেকেরপুকুর গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩’শ মানুষের বসবাস। যেখানকার নারীরা গত ৩ বছর আগেও দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতিগুলো গ্রহন করতে ভয় করত সেখানে এখন বর্তমানে বহু নারী গ্রহন করছেন এসব পদ্ধতি। এসব বিষয়ে কথা হয় ওই গ্রামের ছায়েরা বেগম নামে ৩৮ বছর বয়সী এক নারীর সাথে। তিনি বলেন গত ৩ মাস আগে তিনি ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি গ্রহন করেছেন। বর্তমানে তার ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে।

আফরোজা নামে একই গ্রামের আরেক নারী বলেন, অনেক আগে তিনি শুনেছিলেন দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহন করলে শারীরিক নানা সমস্যা দেখাযায়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তিনি দেখেছেন ক্ষতি নয় বরং জীবনকে নিরাপদ করতে এসব পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর তাই সবকিছু বিবেচনা করে অবশেষে তিনিও এই দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহন করেছেন।
তবে শুধু শেকেরপুকুর গ্রামই নয়; জেলার অধিকাংশ ইউনিয়নেরই চিত্র এখন এমনই। যাঁরা এরই মধ্যে এসব পদ্ধতি গ্রহন করেছেন তারা বলছেন পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্তান নেয়া শেষ হলে অবশ্যই এসব পদ্ধতি গ্রহন করা উচিৎ। অন্যথায় ভুলবসত অনেক বড় ক্ষতি হয়েযেতে পারে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোরশেদা খাতুন বলেন, নারীরা যেভাবে দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহন করছে তাতেকরে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তাদেরকে আর দারে দারে গিয়ে বুঝাতে হবেনা। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহনের ক্ষেত্রে সমাজের পুরুষদের অনেক সহযোগীতা পাচ্ছেন নারীরা। আর তাই এসব পদ্ধতি গ্রহন তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সুলতানা আফরোজ জানান, আইইউডি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। আইইউডি জরায়ুতে এবং ফেলোপিয়ান টিউবে কপার অণু, এনজাইম, প্রোস্টাগ্যান্ডিন এবং শ্বেতকণিকা (ম্যাক্রোফেজ) বাড়িয়ে দেয়, যা শুক্রাণুর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। তাই এই পদ্ধতি খুবই অপকারী একটি পদ্ধতি। পাশাপাশি ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি সেবা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটি অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি বলে অভিহিত। এ পদ্ধতি ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য কার্যকরী। এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর ফলে দাম্পত্য জীবনের সুখানুভূতিতে আর কোন বাধা থাকেনা।

এসব বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলা ফেমেলি প্ল্যানিং এ্যাসিসটেন্ট অফিসার মিজানুর রহমান জানান, ইচ্ছে করলেই এসব পদ্ধতি খরচ ছাড়াই যেকোন নারী বা পুরুষ গ্রহন করতে পারে। কারন সরকারী হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, মডেল ক্লিনিকসহ বিভিন্ন বে-সরকারী ক্লিনিকেও বিনা খরচেই এখন এসব সেবা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহন করলে আর্থিক প্রনোদনারও ব্যবস্থা রয়েছে। তাই যে কেউ ইচ্ছে করলেই এসব পদ্ধতি নির্ভয়ে গ্রহন করতে পারে।