বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, শৃঙ্খলা বিধির নামে তা সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল বিচারপতি সিনহার। আইন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা খসড়াটি ফেরত পাঠিয়েছিলেন তিনি।সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে চাপের মধ্যে বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করার পর ওই শৃঙ্খলা বিধির গেজেট প্রকাশ হয়।গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পর এমন প্রতিক্রিয়াও এসেছে যে এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন করে ফেলা হয়েছে।মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সরকারি আইনজীবীদের ১৯তম প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গটি তোলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে যা বলা আছে, সেই আকারে (গেজিট) করা হয়েছে। মাসদার হোসেনের মামলায় ১২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ১২টি নির্দেশনার ৭ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, একটি রুলস প্রণয়ন করার। সেই রুলসে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার কথা বলা হয়েছিল।

এই শৃঙ্খলাবিধির ২৯ (২) এ বলা হয়েছে, যদি কোনো দ্বিমত হয় এবং সেটা যদি নিরসন না হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্টের শেষ পরামর্শ যেটা সেটাই প্রাধান্য পাবে। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনো মতেই ক্ষুন্ন হয়নি।বিচারপতি সিনহা এই প্রজ্ঞাপনের খসড়াটি ফেরত পাঠানোর পর ৩১ জুলাই এক অনুষ্ঠানেও আনিসুল হক বলেছিলেন, তারা (সুপ্রিম কোর্ট) সংশোধন করে যেটা দিয়েছিল, সেখানে দেখা গেছেৃ আমার কাছে ডকুমেন্ট আছেৃ ১১৬ অনুচ্ছেদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা, সেটা তারা নিয়ে নিতে চায়। আমি কী করে সেটা দিই?যে মামলার রায়ে বিচার বিভাগ আলাদা হয়েছে, সেই মাসদার হোসেন মামলার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদে আহমদ বলেছিলেন, ওই মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করার সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশ ছিল, এটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ষোড়শ সংশোধনীর শুনানির জন্য নতুন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু নিয়মানুযায়ী যে বেে র শুনানি রিভিউ সেই বেে করার কথা বলা আছে, সেহেতু আমার অভিজ্ঞতা বলে এখানে নতুন বিচারপতির জন্য রিভিউ আবেদনের শুনানি বন্ধ থাকবে না।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রুলস অর্ডার ২৬-এর রুল ৮০-তে বলা আছে, যতদূর সম্ভব যে বে শুনানি করেছিল সেই বেে ই শুনানি হবে। আমার মনে হয় না এই মামলা শুনানির জন্য নতুন করে অ্যাপয়েনমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন আছে। পাঁচ জন বিচারপতি শুনানি করতে পারবেন।একমাস ১৩ দিন হলো প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হয়েছে, নতুন বিচারপতি নিয়োগে সর্বশেষ কোনও তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য নেই, রাষ্ট্রপতি কবে নিয়োগ দেবেন। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, বিষয়টি মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। সত্যি সত্যি জানি না কবে তিনি নিয়োগ দেবেন। আশা করি, শিগগিরই হবে। কবে নাগাদ হবে আবারও প্রশ্নে করলে তিনি বলেন, আমি আশা করছি।

পদত্যাগের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি, সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে তোলা এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, সেটা বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে। ওনারা মনে হয় খবর পড়েন না। বিচারপতি এসকে সিনহা প্রধান বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এটি জানানো হয়েছে, এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু বলার নাই।শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে বিচারবিভাগ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ডিসিপ্লিনারি রুলস এর মধ্যে যেসব জিনিস রাখা হয়েছে, বিধি হিসেবে ২৯(২) বিধিতে বলা আছে- এখানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যদি সুপ্রিম কোর্টের মতপার্থ্ক্য হয় এবং আলোচনার পরও নিরসন না হলে সুপিম কোর্টের মতামত সেখানে প্রাধান্য পাবে। এখানেই পরিষ্কার এটা যদি সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন। এটা নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি। তার কাছে এটি সংবিধান দ্বারা ন্যস্ত। যাদের জন্য এই বিধি করা হয়েছে, তাদেরও তো মতামত আছে এ ব্যাপারে। তারা মনে করেছেন, তাদের স্ট্যাটাস বজায় থাকে যদি সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকে। আইনটি ওনাদের পকেটে নেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন। এটা আমরা করি নাই। আমরা শৃঙ্খলাবিধি করে দিয়েছি। ওনাদের কারণে বিচারবিভাগ যে স্বাধীন, সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হয়েছে ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে। আমরা আইনের শাসন দেশে ফিরিয়ে এনেছি। ওনারা পকেটে নিয়ে রেখেছিলেন। সেটা থেকে আস্তে আস্তে বের করে বিচার বিভাগকে মর্যাদার আসনে বসাচ্ছি। তাই তাদের গাত্রদাহ।