গাজীপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বই পেতে শিক্ষকদের টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গুদামে বই নিতে গিয়ে টাকা না দেয়ায় বঞ্চিতরা বিক্ষোভ করেছেন। বই বিতরনের আগেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে প্রতিনিধি নিয়োগ করে এসব অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের যুগ্মসম্পাদক মো. শাহীন পারভেজ জানান, ১লা জানুয়ারি-১৮ অনুষ্ঠিত হবে বই উৎসব। এর আগেই গাজীপুর জেলা কিন্ডারগার্টেন (কেজি) এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে তার সহকর্মী মো. আবু তাহেরকে দিয়ে জেলার সকল কিন্ডারগার্টেনের চাহিদাপত্র তৈরি করে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের কাছ থেকে সরকারি বই সরবরাহ করার কথা বলে মোটা অংকের টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাজীপুর সিটির প্রতি ওয়ার্ডে ওই টাকা আদায়ের জন্য একজন করে প্রতিনিধিও নিয়োগ করেছেন তারা। যারা তাদের চাহিদামত ওই টাকা দেয়নি তাদের চাহিদাপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে দেয়া হয়নি এবং তাদের বইও দেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যলয়ের গুদাম থেকে বই আনতে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/ প্রতিনিধিরা আংশিক বা পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেও বই না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। ওইসব টাকা আদায়ে গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসও জড়িত।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠান ও বইসেটের চাহিদা ভেদে ৬০০টাকা থেকে ২০০০টাকা তারা আবু তাহের ও তাদের প্রতিনিধির কাছে আগেই দিয়ে বৃহস্পতিবার ওই বই আনতে গিয়েছিলেন। তারপরও সব বই না পেয়ে শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেছেন।

গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার মায়া একাডেমীর সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ সিট বইয়ের জন্য তিনি আবু তাহেরকে দুই হাজার টাকা চেয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার সঙ্গে ওই টাকা না থাকায় তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে কর্তৃপক্ষ বিকাশের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা পাঠায়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়িস্থ রিজো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সহকারী শিক্ষক শামীম জানান, তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বই নিতে এসে তাহেরকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়েছে। একই ধরণের অভিযোগ করেছেন গাজীপুর সদর বাঘের বাজার এলাকার আব্দুল গণি মডেল একাডেমী, হাকিম মাতাব্বর স্কুলসহ কয়েক’শ স্কুলের শিক্ষকরা।

টঙ্গীর রিপাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬ষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীর বই পেতে তাদের কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছে আবু তাহের। নবম শ্রেণীর বইয়ের জন্য তিনি ১০হাজার টাকা দাবি করেন।

গাজীপুর জেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবু তাহের তার কোন সহকর্মী নয়। সে যদি তাদের নাম করে আদায় করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কুমার ভৌমিক সাংবাদিকদের জানান, তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে গুদাম থেকে শিক্ষকদের বই বিতরনকালে বাইরের একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। হট্টোগোলের খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে তার কথা বলে বই বিতরণে টাকা আদায় করার বিষয়টি তিনি অবগত নন। কেউ নিয়ে থাকলে এটা তাদের ব্যাপার। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।