২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক সমাপনীকালে এ দাবি জানানো হয়।২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলার বিচারকাজ চলছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।হত্যা মামলায় আসামি ৫২ জন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আসামি ৪১ জন।হত্যা মামলায় ৫২ আসামিদের মধ্যে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ আসামি জামিনে ও ২৩ জন কারাগারে। তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চলছে।এ মামলায় ৪৯২ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।গত ২৩ অক্টোবর শুরু হওয়ার পর প্রায় আড়াই মাসে ২৫ কার্যদিবস ধরে যুক্তিতর্ক শুনানির পর সোমবার তা শেষ করে।এরপর ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মঙ্গলবার থেকে আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরুর দিন ঠিক করেন।আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ পড়বে।পুরানো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে এই মামলার বিচার চলছে। সোমবার যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ঝালকাঠীর দুই বিচারক (সোহেল- জগন্নাথ) হত্যা মামলা এবং ভারতের রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় দেওয়া উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করার অসৎ উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এই নৃশংস হামলা করা হয়েছিল।২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তাতে নিহত হন ২৪ জন। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এর তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ ওঠার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর অধিকতর তদন্তের পর খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক, সবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন।শুনানিতে রেজাউর বলেন, আওয়ামী লীগকে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে জামায়াত-বিএনপিকে ক্ষমতায় রেখে হরকাতুল জিহাদকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিদের কর্মকা- নির্বিঘেœ পরিচালনার হীন উদ্দেশ্যই এ হামলার প্রধান কারণ।যুক্তিতর্ক শুনানি শুরুর প্রথম দিনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সৈয়দ রেজাউর রহমানযুক্তিতর্ক শুনানি শুরুর প্রথম দিনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সৈয়দ রেজাউর রহমানএই মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিএনপি আমলে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর অভিযোগ আসে। তাদের পাশাপাশি ওই সময়কালের তিন পুলিশ প্রধানও এখন মামলার আসামি।৫২ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।এখন ৪৯ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আটজন এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, তারা ২২৫ জন সাক্ষী ও আসামিপক্ষের ২০ জন সাফাই সাক্ষীকে জেরার মাধ্যমে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। রেজাউর বলেন, ৪৯ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ও বিচার প্রার্থী মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আইনের বিধানের আলোকে আসামিদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সাজা প্রার্থনা করছি।২০০৪ সালের ঘটনার পর পর দিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন।