আগামী ৫জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ এবং দেশব্যাপী মহানগর, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, যদি তাই হয় তাহলে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পান কেন? ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতন্ত্রহীনতার গভীর খাদের দিকে ঠেলে দিলেন কেন? বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের গণবিরোধী কার্যক্রমে গোটা দেশ আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। নানা কেলেঙ্কারির হোতা বর্তমান সরকার এবং ‘বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট-নির্বাচন কমিশন’ এর অধীনে কখনই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। বছরের প্রথম দিনে জনগণের প্রত্যাশা- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাল দেওয়ালের ভেতরে বন্দী। গণতন্ত্রে অপরিহার্য শর্ত হলো বিরোধী দল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারি নির্যাতনের শিকার। গণতন্ত্রে স্বীকৃত সভা-সমাবেশকে তারা বানচাল করেছে। কণ্ঠরোধ করার জন্য গণমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা চিন্তা, মত ও বিশ্বাসের মানুষের ওপর নেমে এসেছে সরকারের নানা আক্রমণের আঘাত।রিজভী বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মিথ্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় জর্জরিত। জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ভুয়া ও জালিয়াতি করে সাজানো মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার জন্য প্রতি সপ্তাহে কয়েকদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে প্রায় সারাবছরই আদালতে হাজিরা দিতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে রিজভী বলেন, আমরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছি; গত পরশুদিন এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো কথা জানতে পারিনি। তবে ৫ জানুয়ারি আমরা জনসভা অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি রাখছি।তিনি বলেন, তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি, যাতে সরকারের মানসপট প্রকাশ পাবে। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের মো. আওলিয়া, শিবপুরের নবাব আলী ও মো. লিটনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চিতলমারী উপজেলা সদরের মমিনুল হক টুলু, আহসান হাবিব, জাকারিয়া, শরিফুল আলম অপুর বাসায় পুলিশ তল্লাশির নামে আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে, বাড়ির মহিলাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে।শুধু তাই নয়, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় আজকে সকালে শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকালে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এতে স্থানীয় বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদুজ্জামান ভোলা, ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান সিজারসহ অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।এসব ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি নেতা রিজভী।নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তা ঠেকাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট।নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় পেট্রোল বোমা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ও নাশকতায় অনেকে মারা যান।পরে নির্বাচনের প্রথম বছরপূর্তির দিন থেকে বিএনপি নেত্রীর ডাকা টানা তিন মাসের অবরোধ- হরতালের সময়েও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়, যাতে অগ্নিদগ্ধ ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়াপারসন এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, মুনির হোসেন এবং রফিকুল ইসলাম মাহতাব উপস্থিত ছিলেন ।