প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। তিনি আমাকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন। আমি এই মন্ত্রণালয়ের ছাত্র। টেবিলের একপাশ থেকে এতদিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দিতাম। শ্যাম সুন্দর সিকদার সচিব, তাকে আমি দাদা বলেই সম্বোধন করতাম। তার কাছেই দাবি-দাওয়া জানাতাম। এখন আমার অবস্থান টেবিলের উল্টো দিকে। যে দাবি-দাওয়া নিয়ে এতদিন এখানে আসতাম, সেগুলো বাস্তবায়ন করা এখন আমার প্রধান কাজ, চ্যালেঞ্জও বটে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে এসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সচিবালয়ের ৭নং বিল্ডিংয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বসে মন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলে, এক বছর অনেক কম সময়। কিন্তু আমি মনে করি, এটি যথেষ্ট। এক বছরে দেশের অনেক কাজ হওয়া উচিৎ। এই মন্ত্রণালয়ের দু’টি বিভাগ, একটি অন্যটির পরিপূরক। এই মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলো (টিঅ্যান্ডটি, টেশিস, টেলিটক ইত্যাদি) সেবাধর্মী এবং লাভজনক হয়নি। আমি এগুলোকে সেবাধর্মী ও লাভজনক করার চেষ্টা করব।আমি স্পষ্টবাদী, মানুষের সমালোচনা করি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অন্যের সমালোচনাও সহ্য করি। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম এবং বিশ্বের পঞ্চম স্তম্ভ হচ্ছে ইন্টারনেট। তাই তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়ক নির্মাণ করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক বিটিআরসিকে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা না করে সংস্থাটির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে সহায়তার মানসিকতা নিয়ে এগোতে চান নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।টেলিযোগাযাগ বিভাগ ও বিটিআরসির মধ্যে টানাপড়েনের বিষয়ে উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিটিআরসি সুনিদির্ষ্ট দায়িত্ব পালন করলেও এককভাবে সমস্ত কার্যক্রম চালাতে পারে না। তবে সেখানে নিয়ন্ত্রণের কোনো বিষয় নেই।বিষয়টি হচ্ছে, জনগণের পক্ষে কাজ করছে কি না ওই জায়গাটা নিশ্চিত করা। আমি মনে করি না, বিটিআরসির হাত-পা বেঁধে তারপর মন্ত্রণালয় থেকে বলতে হবে, তুমি কাজ করো।(বরং) আমি বিশ্বাস করি, কোন জায়গায় তাকে ফ্যাসিলিটেট করা দরকার তা করা হবে।… নিয়ন্ত্রণ নয়, বড় বিষয় হচ্ছে সহায়তা করা।২০১০ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের পর টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত ক্ষমতা বিটিআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে চলে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স ইস্যুসহ অন্যান্য বিষয়ে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।তারানা হালিম এই বিভাগের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় সংস্থার কাজে স্থবিরতার জন্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে বিটিআরসিকে স্বাধীন কমিশনে রূপান্তরের পক্ষে চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বক্তব্য দিয়েছিলেন।বিটিআরসির স্থবিরতার জন্য বিভিন্ন কাজে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন।

নতুন মন্ত্রী বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকার কারণ নেই।‘দুটি বিভাগ দুটি চোখ বা হাতের মতো’ একসাথে কাজ সমন্বিতভাবে করবে।ইন্টোনেটের গতি ও সাশ্রয়ীমূল্যে নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশে ‘ডিজিটালাইজড’ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আছে তার উপযুক্ত সেবা যাতে তারা পায়। জনগণ যেন অভিযোগ করার সুযোগ পায় এবং সেবিষয়ে পুরোপুরি ব্যবস্থা যাতে নেওয়া যায় এবং যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে তা কাটিয়ে উঠা হবে।
৭৮ হাজার টাকার ব্যান্ডউইডথ যদি ৬০০ টাকায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে সে সুযোগ কেন সাধারণ গ্রাহকরা পাবে না। না পাওয়ার অন্তরায় হচ্ছে- মোবাইলের জন্য কলরেট নির্ধারণ করা আছে, ডেটার জন্য নির্ধারণ করা নেই। ইন্টারনেটের জন্য এরকম একটি সীমারেখা থাকা উচিত। আমি ব্যান্ডউইডথের প্যাকেজ নিতে চাই তাহলে কেন দিবেন না, এক এমপিবিএস প্যাকেজ নেব এ সুযোগটা থাকতে হবে।

অনাকাঙ্খিত এসএমএস ভোগান্তি লাঘবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করা উচিত। ১৪ কোটি সংযোগ ব্যবহারকারীর অধিকার অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, কারণ এটি জনগণের সরকার।যত অভিযোগ আছে আপনারা সবগুলো জানান এবং মীমাংসা করে দিতে পারি সেটাও আমি করবো।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে কোন কাজগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানতে চাইলে নতুন মন্ত্রী বলেন, “আমাকে ৫ থেকে ৭ দিন শিখতে হবে। প্রকল্পগুলো যেসব আছে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পিকআপ করে নেব।এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী নতুন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ে নতুন মোস্তফা জব্বার বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছিল তখন মনে করেছিলাম, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতেই পারি। তবে পরে হলেও শেখ হাসিনা আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন।২০১৫ সালে টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় তাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এ বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি বলেছিলেন, এর চেয়ে যদি বড় দায়িত্ব দেই। তিনি আসলে কোনো কথাই ভুলেন না।এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া মন্ত্রী। এসময় তার সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।