আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক শুভ শক্তির কাছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য।তিনি বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি সত্য। কিন্তু তাদের দোসররা এখনও দেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। রক্তের হোলি খেলা খেলছে। বিএনপি জামায়াত যেভাবে পাকিস্তানী কায়দায় দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে জনগণ কখনো তাদের সমর্থন দেবে না। এ বছর হবে তাদের পরাজয়ের বছর। আবারো তারা পরাজিত হবে।

ওবায়দুল কাদের রোববার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বিএনপি জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের খন্ডচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তবে এ কথা বলেন।আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বক্ষুয়া ও কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রলবোমা হামলায় আহতরা তাদের অবর্ণনীয় যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের। আহতদের হাতে আওয়ামী লীগের সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়া হয়।ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন বানচাল ও সরকার পতনের নামে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং যানবাহন অগ্নিসংযোগ করেছে তাতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ দৃশ্য ধ্বংসযজ্ঞের কথাই মনে করিয়ে দেয়।তিনি বলেন, যারা হিংসার আগুনে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ঘৃনার আগুনে জ্বলছে। মানবিকতাকে যারা পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা কিভাবে জনগনের ভোট চায়। তাদের জনগণ কখনো সমর্থন করবে না।সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে বিএনপি জামায়াত দেশের মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তাঁদের অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার চিত্র জনগনের সামনে তুলে ধরে তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যে কোন মূল্যে রুখতে হবে। আগামী নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও সরকারকে বিব্রত করার জন্য নিজেরাই গুমের নাটক তৈরি করছে। ২০১৫ সালে পেট্রলবোমা হামলার আসামী সুইডেনে পালাতক বিএনপি নেতা নাহিদ দেশের গুম ও অপহরণের নেতৃত্ব দিচ্ছে।তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজকে গুম করে দেশে এ সংস্কৃতি চালু করেছিল। তাঁর সময় গুম হওয়া কোন ব্যক্তি আর ফিরে আসেন নি। তাই বিএনপির মুখে গুম-অপহরণের কথা মানায় না। কারণ দেশে এ সংস্কৃতি তারাই চালু করেছিল।

এইচ টি ইমাম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের চিত্র দেশের মানুষের সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ২০০৪ সালের একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার চিত্র যেভাবে প্রচার করা হয়েছিল সেভাবে বিএনপি জামায়াতের পেট্রলবোমা হামলার চিত্র তুলে ধরতে হবে।তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার চিত্র দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে কখনো বিএনপি জামায়াতকে দেশের মানুষ ভোট দেবে না। ২০০৮ সালের চেয়েও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী বেশি আসন পাবে।বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নাশকতার চিত্র তুলে ধরা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার চিত্র তুলে ধরতে এগিয়ে আসা উচিত।ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার পতন আন্দোলনের নামে বিএনপি যেভাবে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাতে বিএনপি রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের চরিত্র লাভ করেছে।সভায় ২০১৫ সালে পেট্রলবোমা হামলায় মারাত্মকভাবে পুড়ে আহত হওয়া বগুড়ার ট্রাক ড্রাইভার পটল মিয়া, নিহত নুরুজ্জামানের স্ত্রী ও মাইশার মাতা মাফরুহা বেগম ও দরিদ্র আলু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম তাদের দূর্বিসহ জীবনের কথা তুলে ধরেন।এর আগে বিএনপি-জামায়াতের ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী থেকে তিনমাস ব্যাপী অবরোধকালে প্রেট্রলবোমা হামলায় হতাহতের চিত্র ও সরকারী-বেরকারী সম্পক্তিতে চালানো নাশকতার বিভিন্ন ছবি নিয়ে তৈরি দু’দিনব্যাপী আলোকচিত্র উদ্ধোধন করা হয়। আগামীকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে।অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি-জামাায়াতের চালানো পেট্রলবোমা হামলা, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তান্ডব লীলা ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াতের বিভিন্ন নাশকতার চিত্র সম্বলিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।