মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, দেশের পক্ষে শত্র“পক্ষের সাথে লড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে সকল প্রমানাদী থাকা দরকার তাও রয়েছে। শুধু সনদ না পাওয়ায় সরকারি সকল সুযোগ সুবিধ্ াথেকে বঞ্চিত হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। সে সকল মুক্তিযোদ্ধারা হলেন; মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ রহমান সরদার, কামাল হোসেন, মন্টু মালিথ ও জামাল উদ্দিন। এদের বাড়ি উপজেলার পাকশী ও সাহাপুরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে ০৫.৪৩.৭৬৩৯.০০০.১৬.০০২.১৩৫৩৫ নং স্মারকে গত ৩১/০৩/২০১৩ এর আলোকে খসড়া ডাটা বেইজ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ সংশোধন-সংযোজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচির (কর্মসূচী) সৈয়দ মুজিবুল হকের বরারব সম্প্রতি ৩৮৩ জনের একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ক্রমিকানুসারে ২২ নং মোঃ রেজাউল করিম, পিতা- চাঁদ আলী মালিথা, সাং-সাহাপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা, ২৩ নং মোঃ রহমান সরদার, পিতা- মৃত নুরু সরদার, সাং-সাহাপুর, ঈশ্বরদী, ২৪ নং কামাল হোসেন, পিতা- মৃত করিম সরদার, সাং-পাকশি, ঈশ্বরদী, ২৪ নং মন্টু মালিথা, পিতা- মৃত চাঁদ আলী মালিথা, সাং-সাহাপুর, ঈশ্বরদী ও ২৭ নং জামাল উদ্দিন পিতা- মৃত- করিম সরদার, সাং-সাহাপুর, ঈশ্বরদী, পাবনার নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সনদ থেকে বঞ্চিত এই মুক্তিযোদ্ধারা দাবী করেন, ৩৮৩ জনের নাম সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে একই সাথে যুদ্ধ করা ওই তালিকার ৪ নং শফিক আহমেদ, ১৯ নং আমজাদ হোসেনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাই সনদ পেয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সনদপত্র থেকে বঞ্চিত এই পাঁচজন ২০০৫ সালেও বাদ পড়াদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত ছিল। দারিদ্রতা, অজ্ঞতা আর যোগাযোগের অভাবের কারণেই বারবার তারা সনদপত্র প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। অথচ তাদের সাথে যুদ্ধ করা অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পেয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
অথচ বাদ পড়া এই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুস সোবহানের বিপক্ষে সাক্ষী দিয়ে জামায়াতের রোষানলে আছেন। মোঃ রহমান সরদার, পিতা- নুরু সরদার, সাং-সাহাপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত সংস্থার সাক্ষী। যার আইডি নং ১৩২০১২১১। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক মোঃ আব্দুল হান্নান খান (পিপিএম) চেয়ারম্যান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ঢাকাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার মামলা নং-১৫/১২ এর সাক্ষীর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন। এরই মধ্যে বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাগণ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আপিল করেছেন যার নং- জামাল উদ্দিন ২৪১১৮, কামাল উদ্দিন ২৪১১৭, মন্টু মালিথা ২৪১২০, রেজাউল করিম ২৪০০০ এবং রহমান সরদার ২২৫৫৫।
বাদপড়া এ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, একই গেজেটভুক্ত তালিকায় ৭ নং সেক্টর এর অর্ন্তভূক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সমশের আলী, পিতা: রফিজ উদ্দীন কাজী, সাহাপুর, গেজেট নম্বর-১১৭৪, শফিকুল ইসলাম, পিতা মৃত চাঁদ আলী, সাহাপুর, গেজেট নম্বর-২২৪২, আমজাদ হোসেন, পিতা: মৃত আজিম উদ্দীন, সাহাপুর, গেজেট নম্বর-২২৪৬, আকমল হোসেন, পিতা: মৃত ইসমাইল হোসেন, সাহাপুর, গেজেট নম্বর-১২৫৯, আবুল হোসেন, পিতা: মৃত নুর আলী সরদার, সাহাপুর গেজেট নম্বর-১১৩৫। তারা সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ একই তারা ৫ জন যোদ্ধা নাম তালিকাভূক্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে গেজেট ভূক্ত না করায় এবং সনদ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। ফলে তারা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী রহমান সরদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক (আইজিপি পদমর্যাদার) আব্দুল হান্নান খান (পিপিএম) আমাদের কাগহপত্র দেখেছেন। তিনি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বলেছেন, গেজেটে কেন তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। গেজেট অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার কারণও তিনি দেখছেন না। তিনি সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর তাদের গেজেট অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশও করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মাতৃভূমি রক্ষার তাগিদে নিজের পরিবার পরিজনের কথা না ভেবে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেই যুদ্ধে নেমেছিলাম। তাদের অভিমত, ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার করায় আমরা স্বাধীনতার মূলস্তম্ভকে হারিয়ে হতবিহবল হয়ে পড়ি। আমাদেরকে অসহায় করে দেয়া হয়। যুদ্ধের পর থেকে দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করেই পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছি। অনেকেই অনেক সময়ে অর্থের বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছেন। তাদের কথায় রাজি হইনি। বিশ্বাস রেখেছি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। জীবনের শেষদিন হলেও এর স্বীকৃতি পাবো। তাদের দাবী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ভুক্ত করে আমাদের মর্যাদা ফিরে দেবেন এমন প্রত্যাশাই রাখি।