কালোজিরা Nigella sativa L), Ranunculaceae পরিবারভূক্ত বর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কালোজিরা অতি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একটি মসলা ফসল। এটিকে কালিজিরাও বলা হয়। কালিজিরার আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। কেউ কেউ বলেন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর উৎপত্তি স্থান। ওষুধ শিল্প, কনফেকশনারি শিল্প ও রন্ধনশালায় নিত্যদিনের ব্যঞ্জরিত খাবার তৈরিতে কালিজিরার জুড়ি নেই। বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি পানীয় দ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধি করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে মসলা ফসলের মধ্যে কালিজিরার ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার আছে বিশ্বব্যাপী। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি অন্যতম উপাদান। কালিজিরার আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহু রকমের ব্যবহার আছে। এটি প্রসাধনীতেও ব্যবহার হয়। কালিজিরার যে অংশটি ব্যবহার করা হয় তাহলো শুকনো বীজ ও বীজ থেকে পাওয়া তেল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করে। হাদিসে আছে কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত অন্য সব রোগ নিরাময় করে। এজন্য কালিজিরাকে সব রোগের ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নিয়মিত ও পরিমিত কালিজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন করে।

কালিজিরার পুষ্টিগুন ॥
কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালিজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত । একমাত্র মৌমাছিই কালোজিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। কালোজিরা ফসলে ক্ষেত্রে মৌমাছি বাক্স ¯হাপন করে দেখা গেছে যে, ফলন প্রায় ১০-১২% বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থে মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে- “আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন:পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরি কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৮ ও ৬৯)। আল্লাহর হুকুম, রহমত ও কুদরতে কালোজিরার মধুও প্রতিটি রোগের ঔষধ। কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কালোজিরার প্রধান পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। প্রতি গ্রাম কালিজিরায় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ইত্যাদি।

কালিজিরার ঔষধিগুন ॥
খ্রী¯টপূর্ব ৩০০০ বছর থেকে কালোজিরা মসলা ও ঔষধি গাছ হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি নাম। বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ক্যানন অব মেডিসিন’ এ ‘কালোজিরা দেহের প্রাণশক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে’ উল্লেখ করেছেন। কালিজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ, অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা ও দাঁতের ব্যথা, বাতের ব্যথা, পেটের বাথা, মাথাব্যথা কমাতে, মাথা ঝিমঝিম করা, মাইগ্রেন নিরাময়ে যথেষ্ট উপকারী বন্ধু হিসেবে কাজ করে। পেটফাঁফা, চামড়ার ফুসকুরি, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, এজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ; ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাসট্রিক আলসার, জন্ডিস, খোসপাঁচড়া, ছুলি বা শ্বেতি, অর্শরোগ, দাদে কালিজিরা অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে ইনসুলিন সমন্বয় করে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে। হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, হাইপারটেনশন, নিম্ন রক্তচাপকে বাড়ায় আর উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।

কালোজিরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকোটিক প্রভাব রয়েছে। এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে এবং ইন্টারফেরন তৈরি বাড়িয়ে দেয়। কালিজিরায় থাইমোকুইনিন থাকে যা পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের দেহে উৎপন্ন টক্সিনের প্রভাব থেকে নিউরনের সুরক্ষায় কাজ করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিরাময় করে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রতিদিন ২ গ্রাম কালিজিরা খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমায়, ইনসুলিনের বাঁধা দূর করে এবং অগ্নাশয়ে বিটা কোষের কাজ বাড়ায়। কালিজিরা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। কালোজিরা ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অপ্রধান মসলা ফসল হিসাবে পরিচিত। ব্যবহার ও উৎপাদনের দিক থেকে গৌন হলেও এদেশের রসনাবিদদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মসলা। পাঁচফোড়নের একটি অন্যতম উপাদান এই কালোজিরা। রন্ধনশালায় দৈনন্দিন বিভিন্ন খাবার তৈরিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কালোজিরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিশর, ইরাক, সিরিয়া, ইরান, জাপান, চীন, তুরস্ক (শিওয়ে, ২০১১) প্রভৃতি দেশে চাষাবাদ হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টন কালোজিরা উৎপন্ন হয়।

পবিত্র ধর্ম গ্রন্থে কলোজিরা সম্পর্কে যা বলা আছে-
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রোগ- যন্ত্রনা খুব বেশি কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কলোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে। – মুজামুল আওসাত: তাবরানী। হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, “প্রতিদিন ২১টি কলোজিরার ১টি পুটলি তৈরি করে পানিতে ভিজাবে এবং পুটলির পানির ফোটা নাশারন্দ্রে (নাশিকা, নাক) ব্যবহার করবে (তিরমিযী, বুখারী , মুসলিম)।

বাংলাদেশে কালোজিরা ॥
বাংলাদেশে ১৪,৭৪২ হেক্টর জমিতে ১৬,৫২৬ মে.টন কালোজিরা উৎপন্ন হয় (সূত্র: ডিএই, ২০১৭)। ফরিদপুর, মাগুরা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার উচুঁ ও মাঝারী উচুঁ এবং দোঁ-আশ থেকে বেলে-দোঁ আশ মাটিতে চাষাবাদ বেশি হয়ে থাকে। মাটির পিএইচ (ঢ়ঐ) ৭.০-৭.৫ এবং উচ্চমাত্রায় অণূজীবের কার্যক্রমসম্পন্ন বেলে-দোঁআশ মাটি কালোজিরা চাষের জন্য উত্তম। মে, ২০১৭ প্রকাশিত বিবিএস এর তথ্য মতে ২০১৫-১৬ সালে ৫২০ মে. টন কালোজিরা (ঐঝ ঈড়ফব ০৯০৯-ইষধপশ ঈঁসরহ ঝববফং) ৫ কোটি ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে ফসলটির হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৬০০-৭০০ কেজি।

কালোজিরা ফসলের গবেষণা ও অর্জন এবং সম্প্রসারণ ॥
প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরার চাষাবাদ হয়ে থাকলেও বাংলাদেশে অতীতে কালোজিরা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন গবেষণা পরিলক্ষিত হয়নি বললেই চলে। তবে মসলা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয় জার্মপ্ল¬াজম সংগ্রহ এবং ১৯৯৭-৯৮ সাল হতে মূল্যায়ন ও বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে। পরবর্তীতে প্রাথমিক ফলন পরীক্ষা, অগ্রবর্তী ফলন পরীক্ষা ও আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ যাচাই বাছাই করে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক “বারি কালোজিরা-১” নামে কালোজিরার একটি উচ্চ ফলনশীল জাত চাষাবাদের জন্য উদ্ভাবন করা হয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সার, সেচ ও রোগ বালাই ব্যব¯হাপনাসহ অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। জাত উদ্ভাবনের পর বিগত বছরগুলোতে এর বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণে লক্ষ্যে বিগত বছরগুলোতে বারি কালোজিরা-১ এর মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন এবং বীজ বিতরণ করা হয়।

বারি’র কর্মকর্তাগণ জানান, বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহার, বেসরকারী সং¯হায় সরবরাহ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র/ছাত্রী উচ্চ শিক্ষা গবেষণা এবং পরবর্তী মৌসুমে গবেষণা কাজের জন্য বীজ সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া প্রযুক্তি হস্তান্তরের নিমিত্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ সালে পাবনা, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শণী ব্লক স্থাপণ করা হয়েছে/হচ্ছে।

জার্ম সংরক্ষণ ॥

গাজীপুরে কালিজিরার ৩০ টি জার্ম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ সকল জার্মপ্লাজম গাজীপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পঞ্চগড়, নিলফামারী ও জামালপুর অঞ্চল সমূহ হতে বিভিন্ন সময়ে সংগ্রহ করা হয়। জার্মপ্লাজম সমূহ এর বৈশিষ্ঠায়ন সহ ডাইভার্সিটি নির্ণয়ের জন্য ধারাবাহিক গবেষণা কার্যক্রম চলছে। অন্যান্য অঞ্চল সমূহ হতে আরো জার্মপ্লাজম সংগ্রহের কাজ অব্যহত আছে।

বারি কালোজিরা-১ এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ॥
জাতটির জীবনকাল ১৩৫-১৪৫ দিন। এর উচ্চতা ৫৫-৬০ সেন্টিমিটার। প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭টি প্রাথমিক শাখা এবং ২০-২৫টি ফল থাকে। প্রতিটি ফলের ভিতরে প্রায় ৭৫-৮০টি বীজ থাকে যার ওজন প্রায়০.২০-০.২৭ গ্রাম। এ জাতের প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ হয়ে থাকে। এবং ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ৩.০০-৩.২৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি এর গড় ফলন ০.৮০-১.০ টন। স্থানীয় জাতের তুলনায় এর রোগবালাই খুবই কম।

গবেষণাগারে রাসায়নিক উপাদান সংক্রান্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার ফলাফল ॥
কালোজিরার তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর, ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যারোমেটিক গন্ধযুক্ত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের কেন্দ্রিয় গবেষণাগারে কালোজিরা, সরিষা ও সয়াবিন বীজের নমুনার রাসায়নিক বিশ্লেষণের তুলনামূলক প্রাপ্ত তথ্য নি¤œরুপ :

কালোজিরা, সরিষা ও সয়াবিন বীজের রাসায়নিক বিশ্লেষণের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায় যে, কালোজিরা তেলে পামিটিক এসিড ও লিনোলিক এসিডের পরিমাণ অন্য তেলের তুলনায় বেশি এবং ফ্যাট, বিভিন্ন সম্পৃক্ত এসিড, অলিক এসিডের পরিমাণও সন্তোষজনক পর্যায়ে বিদ্যমান।

কালোজিরার ভবিষ্যৎ গবেষণা কর্মপরিকল্পনা ॥
কালোজিরার নতুন নতুন জেনেটিক মেটারিয়াল সংগ্রহ ও মূল্যায়ণের পাশাপাশি সারের পরিমাণ নির্ধারণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা, তেল বের করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে ও কিছু প্রযুক্তি নিণর্য়ের কাজ চলছে। বর্তমানে মসলা গবেষণা কেন্দ্রে দেশ ও বিদেশে থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৯ টি জার্মপ্ল¬াজম রয়েছে যা থেকে খুব শীঘ্রই আরও একটি উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। ‘‘কালোজিরার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও মূল্যায়ণ’’ (ঈড়ষষবপঃঃরড়হ ধহফ বাধষঁধঃরড়হ ড়ভ নষধপশ পঁসরহ মবৎসঢ়ষধংস) শিরোনামে কালোজিরার নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য ২০১৬-১৭ বছরে সম্পাদিত গবেষণার ফলাফলে ইঈ০০৯ এবং ইঈ০১০ জার্মপ্ল¬াজম দু‘টিতে বারি কালোজিরা-১ জাতের তুলনায় অধিক ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষাটি আরও ২ বছর সম্পন্ন করার পর নতুন জাত উদ্ভাবন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সীমাবদ্ধতা ॥
কালোজিরার বহুবিধ গুণাগুণ ও ব্যবহার থাকা সত্ত্বেও কালোজিরার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী দেশে কালোজিরার উৎপাদনও কম হচ্ছে। সাধারণত কালোজিরা একটি গৌণ মসলা ফসল বিধায় চাষীরা এটি চাষাবাদে খুব বেশি আগ্রহী নয় এবং যেহেতু রবি মৌসুমে অধিকাংশ ফসলের চাষাবাদ হয় সেজন্য কৃষক একক ফসল হিসাবে কালোজিরা চাষাবাদ করতে চায় না। ন্যায্য বাজার মূল্য প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, দুর্বল বাণিজ্যিক কাঠামো, বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ ব্যব¯হাপনার জন্য কাক্সিক্ষত পরিমাণে কালোজিরার বীজ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কালোজিরার উৎপাদন বৃদ্ধিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যেমন কৃষকদের মধ্যে কালোজিরার বীজ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর,কৃষক প্রশিক্ষণ জোরদারকরণ ইত্যাদি। নি¤েœর ছকে বর্ণিত গাজীপুর ও কারওরান বাজারে বিগত ৫ বছরের পরিবর্তনশীল বাজার মূল্যের চিত্র দেখা যায় এবং ¯হানীয় (গাজীপুর) ও কারওরান বাজার উভয় ক্ষেত্রেই কালোজিরার বাজার মূল্য ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি এবং ২০১৭ সালে সবচেয়ে কম পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশে কালোজিরা চাষের সম্ভাবনা
দেশের উত্তরাঞ্চলে এর চাষবাদ সীমিত। সুতরাং এতদঞ্চলে বিশেষ করে লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুরের চরাঞ্চলে উন্নত জাতের কালোজিরার চাষ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। কালোজিরা সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কালোজিরা এবং কালোজিরার দ্বারা উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
কালোজিরা চাষাবাদে সেচ কম দিতে হয়, কখনও ১/২ টি সেচে ভাল ফলন পাওয়া যায় বিধায় বরেন্দ্র এলাকায় এর চাষাবাদ বৃদ্ধি করার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে কালোজিরা চাষ করা যেতে পারে। ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা ইত্যাদি এলাকার চাষিরা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে। পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতের চারপাশে এবং ক্ষেতের ভিতর পেঁয়াজের ১০-১৫ সারি পর কালোজিরা বপন করা যেতে পারে। এতে কালোজিরার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে । তাছাড়া অন্যান্য রবি ফসলের ক্ষেতের চারপাশেও কালোজিরা বপন করা যেতে পারে।

উপসংহার ॥
কালোজিরা একটি অর্থকরী এবং বহুগুণে গুণান্বিত উচ্চমাণসম্পন্ন পুষ্টিকর মসলা জাতীয় ফসল। তাই এর প্রচার,গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা আবশ্যক। তাছাড়া এ ফসলের গুণাবলী ও ব্যবহারের ব্যাপকতা বিষয়ে প্রচারণার সুনির্দ্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার এখনই সময়।