বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির আগমনের প্রতিবাদে বুধবার ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় এই মুসলিম সংঘের কর্মীদের বিক্ষোভ। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির আগমনের প্রতিবাদে বুধবার ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় এই মুসলিম সংঘের কর্মীদের বিক্ষোভ।

বাংলাদেশ তাবলিগের ১১ সদস্যের শুরা কমিটির দুজন বাদে সবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর মাওলানা সাদের বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে ওই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মন্ত্রী। তাবলিগ জামাতের এক পক্ষের বিরোধিতার মুখে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ না দিয়েই বাংলাদেশ ছাড়তে হচ্ছে দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীকে।তাকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়া এই ইসলামিক সংঘের দুই পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, উনি ইজতেমায় যাবেন না। সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন। দুপক্ষই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে।বুধবার দুপুরে তাবলিগ জামাতের এক পক্ষের বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকা পৌঁছানোর পর থেকে মাওলানা সাদ আছেন বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র ঢাকার কাকরাইল মসজিদে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাদ যে কদিন বাংলাদেশে থাকবেন, কাকরাইল মসজিদেই থাকবেন বলে বৈঠকে ঠিক করা হয়েছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়ে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ও আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। এই বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। উভয়পক্ষ এ সমঝোতা প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইজতেমার বিষয়ে সরকার কখনোই হস্তক্ষেপ করেনি, এবারও করবে না। ইজতেমার নিরাপত্তায় সব ধরনের সহযোগিতা বরাবরের মতো এবারও দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ইস্যুকে ঘিরে যারা রাস্তা-ঘাটে নেমেছিলেন আশা করছি তারাও আজ ফিরে যাবেন। আর মাওলানা সা’দ যে মন্তব্য করেছেন তার যৌক্তিকতা নিয়ে আলেমরা নিজেরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনও বক্তব্য নেই।এ বৈঠকে গুলশান জামে মসজিদের খতিব ও যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এতে তাবলিগ জামাতের ১১ সদস্যের শুরা সদস্যের প্রায় সবাই অংশ নেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অন্তত দু’জন অংশ নিতে পারেননি বলে জানা গেছে।বৈঠকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ আব্দুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।এ বৈঠকে বেফাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা আশরাফ আলী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মাহফুজুল হক, গাজীপুরের কাপাসিয়ার দেওনা পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ছিলেন। মাওলানা সা’দের পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামের নেতৃত্বে তিন জন মুরব্বি।

উল্লেখ্য, দিল্লির নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির ইজতেমায় অংশ নেওয়াকে ঘিরে গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) থেকে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তাকে প্রতিহত করতে তাবলিগ জামাতের একটি পক্ষ এবং কওমি মাদ্রাসার আলেম ও শিক্ষার্থীরা গতকাল থেকে আন্দোলন করছেন। এ অবস্থায় অচলাবস্থা নিরসনে উপায় খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আহ্বানে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে বসেন তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ কওমি আলেমরা। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় সচিবালয়ে অবস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই বৈঠক শুরু হয়ে মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়।

সম্প্রতি কওমি শিক্ষা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে তাবলিগ জামাতের দিল্লির মুরব্বি মাওলানা সা’দের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ভারতের দেওবন্দের আলেমরা। এরই জের ধরে বাংলাদেশেও কওমি আলেমরা তাকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন। আসন্ন ইজতেমায় অংশ নিতে গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) মাওলানা সা’দ ঢাকায় এলে বিমানবন্দরেই তাকে প্রতিহতের উদ্দেশ্যে তাবলিগের একাংশ ও কওমিপন্থী আলেমরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তবে বিকালে বিশেষ পুলিশ পাহারায় তাকে কাকরাইলের তাবলিগ মসজিদে আনা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর ও আশেপাশের এলাকায় টানা ৭ ঘণ্টা মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিষয়টির কোনও সমাধান না হওয়ায় আজও সা’দবিরোধীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট এলাকায় আন্দোলন শুরু করে। এ অবস্থায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে উভয়পক্ষকে আজ দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে বসার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) টঙ্গীর তুরাগ নদীর পারে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে।