দেশের উন্নয়নে সরকার তৃণমূল মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী তৃতীয়বারের মতো উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনা, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা এবং চাঁদপুরে স্থানীয় কর্মজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পর্কে স্থানীয় জনগণকে অবহিত করেন। দেশের ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলায় বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন এই মেলা চলবে।

আওয়ামী লীগে উন্নয়নের ধারা বিএনপির কারণে বন্ধ হয়Ñ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে সাবলম্বী করতে ধনীদের আরো ধনী না করে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন প্রয়োজন।সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিজ নিজ জেলায় এই উন্নয়ন মেলার আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করা হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। তৃণমূল মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে সরকার।জনগণ সরকারের নেয়া উন্নয়নের সুফল পেতে শুরু করেছেÑউল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইমধ্যে দেশের বাজেট ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমান উন্নত ও সহজ করাই সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।জাতীয় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়; সেজন্য সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে দরকার।সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা জানানো, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সাফল্যের প্রচার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের যৌথ অংশগ্রহণে স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে মতবিনিময়ের জন্যই এ মেলার আয়োজন।প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের উন্নয়নটা হচ্ছে সার্বিকভাবে সকল জনগণের জন্য। আর বিশেষ করে আমাদের গ্রামের মানুষের জন্য। আমরা প্রতিটি গ্রামকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই; চলাফেরার জন্য রাস্তাঘাট উন্নত করতে চাই।উন্নয়ন মানে হচ্ছে জনগণের উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের উন্নয়ন। এই উন্নয়ন হচ্ছে সার্বিকভাবে (দেশকে) বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে।ভিডিও কনফারেন্সে চাঁদপুরের এক মৎস্যজীবী কারেন্ট জাল প্রস্তুত ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।ওই মৎস্যজীবী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “কারেন্ট জাল যারা বিক্রি করে, জাল যারা তৈরী করে; তাদেরকে ধরে না। জেলেদের ধরে।

মৎস্যজীবীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কোটা রাখার অনুরোধও তিনি করেন।প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, যারা কারেন্ট জাল তৈরি করে ও বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।বরগুনায় আশ্রয় প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী একজনের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমানকে জেলায় কিছু অগ্রসর দ্বীপ চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সেখানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। বরগুনায় পর্যটনের উন্নয়নেও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।ঝিনাইদহের পুনর্বাসিত ভিক্ষুক মর্জিনা বেগমের সঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে মর্জিনা এখন একটি ছোট মুদি দোকান চালান। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো জেলার প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা একদিনের বেতন দিয়ে তহবিল করে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সেখানে অর্থ দেওয়া হবে।হবিগঞ্জে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের একজন উপকারভোগী এবং একজন চা শ্রমিকের সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন শেখ হাসিনা।গাইবান্ধার সরকারি ভাতাভোগী এবং মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আগামী মাসেই বালাসী ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে পুনরায় ফেরি পারাপার শুরু করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।এই পথে যমুনা নদীর তলদেশে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির একটি পরিকল্পনাও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।