নির্দলীয় সরকার সংবিধানসম্মত নয় বলে আসা আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।তিনি বলেছেন, ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কেননা, সংবিধানে নিরপেক্ষ সরকার বলে যেমন কিছু নেই, তেমনি নির্বাচনকালীন সরকার বলেও কিছু নেই।জাতিকে বিভ্রান্ত করতে এটা বলা হচ্ছে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ এ কথা বলেন। ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট নামে একটি সংগঠন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শুক্রবার ক্ষমতাসীন সরকারের চার বছর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। তিনি ওই নির্বাচনে সব নিবন্ধিত দল অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে তাঁর বক্তব্যের কথাই বলেছেন। অর্থাৎ এই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেটাই তিনি বলার চেষ্টা করেছেন। তিনি আরও বলেন, সবার প্রত্যাশা ছিল কীভাবে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলবেন। কিন্তু সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি। এতে জাতি হতাশ হয়েছে।বিএনপির এই নেতা বলেন, ভাষণে উন্নয়নের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে উন্নয়নের মেলার কথা। কিন্তু দেশে এখন দুর্নীতির মেলা হচ্ছে। সব প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। এগুলোর কথা বলেননি। তিনি আরও বলেন, এই বক্তব্যে দেশের সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠেনি, প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-দুঃখ-কষ্ট নিরসন করতে পারেননি।ভাষণে শেখ হাসিনা বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাতে সব দলের অংশগ্রহণের আশা প্রকাশ করেন।নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এবারও তারা একই দাবি তুলেছে; তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকার সংবিধানে নেই।
মওদুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল (শুক্রবার) তার ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি সরকার গঠন করা হবে।কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য কোনো সরকার গঠনের করার কোনো ব্যবস্থা এই সংবিধানে নাই। একথাটা বলে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। মূল কথা হলো যে, এই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটাই তিনি বলার চেষ্টা করেছেন।নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং সেনা মোতায়েনের দাবি রয়েছে বিএনপির; সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কিছু না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন মওদুদ।সারা জাতির প্রত্যাশা করে ছিলে যে, আগামী নির্বাচন কীভাবে দেশে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কিছু একটা বলবেন। কিন্তু সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি।বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে আসা শেখ হাসিনা যে অবস্থান বদলাননি, তার ভাষণে তা স্পষ্ট।মওদুদ বলেন, এই ভাষণে দেশের সত্যিকারের চিত্র তিনি তুলে ধরেননি। তার এই ভাষণ সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-দুঃখ-কষ্ট নিরসন করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে ফিরিস্তি দিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন সাবেক মন্ত্রী মওদুদ।যে উন্নয়নের মেলার কথা বলা হয়েছে, এটা উন্নয়নের মেলা নয়, দুর্নীতির মেলা বসানো হয়েছে। প্রত্যেকটি উন্নয়নের পেছনে যে ব্যাপক দুর্নীতি, সেটা সকলেরেই জানেন। উন্নয়নের নামে দেশে যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, তার কোনো ফিরিস্তি প্রধানমন্ত্রী দেননি।ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট’র উদ্যোগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানান মওদুদ।শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমীন, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন।