২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৩৯৭ জন। আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১ হাজার ৭২২ জন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদী আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৭৯টি।শনিবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছোট-বড় ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে সর্বমোট ২৩ হাজার ৫৯০ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সর্বমোট ৭ হাজার ৩৯৭ জন, আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। যার মধ্যে হাত, পা বা অন্য অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন ১ হাজার ৭২২ জন। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য মনিটরিং এর মাধ্যমে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির প্রায় দেড় থেকে দুই শতাংশ।

তিনি বলেন, বিগত বছর মোট ১ হাজার ২৪৯টি বাস, ১ হাজার ৬৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৭৬টি হিউম্যান হলার, ২৬২টি কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে। এছাড়া ১ হাজার ৭৪টি অটোরিকশা, ১ হাজার ৪৭৫টি মোটরসাইকেল, ৩২২টি ব্যাটারি চালিত রিকশা, ৮২৪টি নছিমন-করিমন দুর্ঘটনায় পড়ে। এদিকে ২০১৬ সালের ৪ হাজার ৩১২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৫ জন এবং ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন। অর্থাৎ ২০১৭ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি চিহ্নিত করছে-বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক অভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্র“টি।এছাড়া ফিটনেস বিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াতও সড়ক দুর্ঘটনার সৃষ্টির কারণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের প্রতি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ব্যাপক প্রচার চালানো। গণমাধ্যমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন, জেব্রাক্রসিং অঙ্কন, চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রী বান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধি বিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স দেয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করার সুপারিশও করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারার সভাপতি ইকরাম আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।