ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এবং দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গতবারের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল।রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে রোববার বেলা দেড়টায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছ থেকে বেলা দেড়টার দিকে দলের বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর বেলা আড়াইটার সময় রিজভীর কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তাবিথ আউয়াল। বিকেল চারটা পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন পাঁচজন। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিধিবিধান মোতাবেক আমি আগামীকাল সোমবার মনোনয়ন ফরম জমা দেব। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাব। আমি বেশ আশাবাদী।তাবিথ বলেন, এর আগের নির্বাচনে দল আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। তখন সেই নির্বাচনে দল আমার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়েছিল। এবারও আমি আশা করছি মনোনয়ন পাব।দল যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, দল যদি কাউকে সমর্থন দেয়, সে ক্ষেত্রে আমি ও আমার সমর্থকেরা একসঙ্গে হয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, অবিভক্ত ঢাকা নগর থাকতেই মেয়র পদে নির্বাচন করতে খালেদা জিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। ঢাকা বিভক্ত হওয়ার পরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে বরাবরই আমার আগ্রহ ছিল। এবারও আমি দলীয় মনোনয়নের জন্য ফরম কিনেছি। তিনি বলেন, আমার পড়ালেখা, অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক পরিচয় ও যোগ্যতা সবকিছু মিলিয়ে দল বিবেচনা করবে এটা প্রত্যাশা করছি।এর আগে সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহ প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ রুহুল কবির রিজভীর কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম নেন। পরে শাকিল বিশ্বমানের সিটির মতো করে ঢাকা মহানগর উত্তরকে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান মনোনয়ন নেন। মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা সিটির জন্য তাঁর সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেলে কী করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যিনি পাবেন আমি তার পক্ষে একশ ভাগ কাজ করব। ম্যাডামের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এ ছাড়া বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুমের পক্ষে মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাসিত মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। মামলার কারণে এম এ কাইয়ুম বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।মনোনয়ন সংগ্রহের পর বজলুল বাসিত বলেন, কাইয়ুম বলেছেন, তাঁকে যদি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন। এরপর দলের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুমের পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনেন উত্তরের সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ জি এম শামসুল হক।এছাড়া আসাদুজ্জামান রিপন নিজে এসে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী জানান, ফরম বিক্রি রোববারই শেষ। সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত নয়া পল্টনের কার্যালয়ে ২৫ হাজার টাকা জামানতসহ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া যাবে।এরপর সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত মনোনয়ন বোর্ড এই সাক্ষাৎকার নেবে।রিজভী বলেন, মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করে একজন প্রার্থীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে। তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। আমরা আশা করছি, সোমবার মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারের পরই সেই নাম জানা যাবে।দুপুরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম কিনেছি। আমি আশাবাদী, বিএনপির মনোনয়ন আমি পাব, কারণ এই নির্বাচনের প্রথম পর্বে আমাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। সে সময় আমার নির্বাচনী কর্মকান্ড দেখে দল সন্তুষ্ট ছিল। এবারও আমি আশাবাদী।মনোনয়ন না পেলে কী করবেন- এমন প্রশ্নে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ বলেন, দল যাকে প্রার্থী করবে শুধু আমি একা নয়, আমরা সবাই মিলিতভাবে এই নির্বাচনে ওই প্রার্থীর জন্য কাজ করব।আসাদুজ্জামান রিপন গতবছর ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন আসাদুজ্জামান রিপন ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মনোনয়পত্র জমা দিলেও পরে মির্জা আব্বাসের জন্য সরে দাঁড়ান।

এবার উত্তরের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম নিতে এসে তিনি বলেন, আমি অবিভক্ত ঢাকা নগর থাকতেই মেয়র পদে নির্বাচন করতে আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। ঢাকা বিভক্ত হওয়ার পরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে বরাবরই আমার আগ্রহ ছিল। এবারও আমি দলীয় মনোনয়নের জন্য ফরম কিনেছি।আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের জন্য আগামী ২৬ ফেব্র“য়ারি ভোটের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি।