ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রভাবশালী নেতাকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ওই সংঘর্ষের ঘটনার পর রাতে বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার পরই দুজনকে তলব করা হয়েছে বলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। তবে কবে, কোথায় দুইজনের সঙ্গে আলোচনা হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের সমর্থকদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রে রূপ নেয় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া। সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও শহরে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জে দুই নেতার দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মারামারিতে ভোটব্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে এটা খুব খারাপ দৃষ্টান্ত।আমি গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। এদের দুজনকেই ডাকা হয়েছে। এটা পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা অভ্যন্তরীণভাবে কথা বলব।এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলা হয়েছে বলেও জানান কাদের।

সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের সমর্থকদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রে রূপ নেয় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া। সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও শহরে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।কাদের বলেন, আমি গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। এদের দুজনকেই ডাকা হয়েছে। এটা পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা অভ্যন্তরীণভাবে কথা বলব।এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলা হয়েছে বলেও জানান কাদের।যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি। আজকে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- তদন্ত চলছে, যারাই জনসম্মুখে পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট করে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড় পাবে না।এই দুইজনকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বসবেন।

এদিকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি যে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেবে তা কারো ধারণায় ছিল না।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধিদের ডেকে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, হাত থাকতে মুখে কি- দুজনের দ্বন্দ্ব এই পর্যায়ে যাবে তা কারোরই বিবেচনায় ছিল না।মঙ্গলবারের হামলার জন্য সরাসরি শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন আইভী। অন্যদিকে শামীম ওসমানের দাবি, হকারদের বসাকে কেন্দ্র করে উসকানি দিয়ে গ-গোল বাঁধানো হয়েছে।বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে হাসতে হাসতে মোশাররফ বলেন, আপনারা দুইজন পাশাপাসি বসা- একজন সুদর্শন পুরুষ আরেকজন সুন্দরী মহিলা, আপনারা যদি মারামারি করেন আমি কি করতে পারি কন?আমার যতদূর মনে হয়, তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে এই ঘটনাটা ঘটতেছে।

আইভী ও শামীম মুখোমুখি হওয়ার পর পরিস্থিতি বোঝা গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আপনাদের কাছে যেমন অপ্রত্যাশিত, আমার কাছেও অপ্রত্যাশিত।(আগে যদি) দানা বানতে আরম্ভ করত, আমরা হয়ত কোনো না কোনো জায়গায় ইন্টারভেন করার চেষ্টা করতাম। আমি আমার মেয়র মহোদয়রে ডাইক্যা আনতাম। আমি বলতাম যে, কোনো রকম ভায়েলেন্স করা যাবে না।এই দুইজনের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের, মনে করিয়ে দেওয়ার পর মোশাররফ বলেন, কালকে যে ইটপাটকেলের মধ্যে সংঘর্ষ চলে যাবে এটা তো বুঝি নাই। বুঝলে আমরা ইন্টারভেন করতাম, আমরা বুঝিইনি জিনিসটা।আইভী-শামীমের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর যাতে না হয় সেজন্য হস্তক্ষেপ করবেন কি না- সেই প্রশ্নে মোশাররফ বলেন, “এখন আপনারা দুইজন যদি মারামারি করতে চান, আমাদের কাছে যদি বিচার না আসে, আমরা অ্যাডভান্স যেয়ে কীভাবে করতে পারি?দুজনই আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমাদের দলেরই। বন্ধু-বান্ধবীর মধ্যে মারামারি হবে, এটা একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেছে।মন্ত্রী বলেন, এখন এটা যদি সরকারের ইন্টারভেনশন দরকার লাগে অবশ্যই আমরা ইন্টারভেন করব। যদিও মনে হয় বিষয়টি একেবারেই ব্যক্তিগত। তবুও আমরা রিপোর্ট চাচ্ছি কী হয়েছে। যদি পয়েন্ট অব কনফ্লিক্ট থাকে সেটা আমরা অবশ্যই মীমাংসা করব, অবশ্যই এরমধ্যে আমরা ইনভলবড হব।আমরা অলরেডি ডিসি-এসপির কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। ঘটনাটি কী- জেনে দুপক্ষরে ডেকে, আমি তো করব না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই করবেন দুপক্ষরে ডেকে নিয়ে। আর যদি উনি আমারে দায়িত্ব দেন আমিও কথাবার্তা বলতে পারব। আমাদের দলের জেনারেল সেক্রেটারিও করতে পারেন।

আইভী-শামীমের দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।বিষয়টা মুখ ঘুরিয়ে রাখার বিষয় না, বিষয়টা রাস্তায় এসে গেছে। শুধু রাস্তায়ই আসেনি, ইটপাটকেলের মধ্যে চলে আসছে।আইভী-শামীমের দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে মোশাররফ বলেন, সরকারের ভাবমূর্তির মধ্যে একেবারেই ইনভলব না, দুজনের ব্যক্তিগত দ্বিমতের বহিঃপ্রকাশ।হকার উচ্ছেদ নিয়ে খানিকটা মেয়র আইভীর পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন স্থানীয় সকারমন্ত্রী। আবার কিছু কিছু বিষয়ে শামীম ওসমানের প্রতিও তার সমর্থনের প্রকাশ ঘটছে।হকার উনি সরাবেন, উনি নির্বাচিত মেয়র। আবার যিনি বাধা দিতেছেন উনি ওই অ লেরই নির্বাচিত প্রতিনিধি। জবরদখল করে কোনো কাজ করা ঠিক না। হকাররা যে কাজটা করছে- তাদের জন্য তো ফুটপাত করা হয়নি। ফুটপাত করা হয়েছে নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার জন্য। তাদের চলাচলে বিঘœ করে হকাররা যদি ওখানে বসে আর মেয়র যদি ওখানে বাধা দেয়, মেয়র তো আইনগতভাবে সঠিক জায়গায় আছে।মন্ত্রী বলেন, তবে আরেকটা কথা আছে যে, হকাররা যদি ওখানে ব্যবসা করে থাকে তবে কী কারণে বাধা দেওয়া হয় নাই। আবার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তো হুট করে এটা করাও তো অমানবিক, আমি অনৈতিক বলব না, কাজটা তো অমানবিক হয়।