যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে ২০১৮ সালে দুর্ভিক্ষের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। দুর্ভিক্ষ নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংস্থা ফেমিন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম নেটওয়ার্ক জানায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে লোহিত সাগরের দুই বন্দরে অবরোধ চলতে থাকলে নতুন করে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ এর জুলাইয়ে গত বছরের একইসময়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে। এর আগে জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, দেশটিতে বিশ্ব-ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে জোরালো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সৌদি জোট যখন ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অবরোধের ডাক দিয়েছে, তখনই এই আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘ।সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের তা-ব এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি এনেছে দেশটিতে। নতুন করে সেখানে অবরোধ আরোপে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘ।মার্কিন সমর্থিত এই জোটের অভিযোগ, ইরান হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে। আর এই সরবরাহ বন্ধ করতেই অবরোধ আরোপ তাদের।মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের আমদানির ৮৫ শতাংশই থাকে খাবার ও ওষুধ। মানবিক দিক বিবেচনা করে ৩০ দিনের জন্য সোমবার বন্দর খুলে দেওয়া হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইয়েমেনের পরিচালক স্টিফেন এন্ডারসন বলেছেন, তিনি সন্দিহান যে বন্দরের অবস্থা এমন থাকবে কিনা।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বন্দরগুলো আবার বন্ধ হয়ে গেলে অনেক মানুষ মারা যাবে। ইয়েমেনিরা যুদ্ধ, খাবার স্বল্পতা, জ্বালানি ও খাবারের দামের ঊর্ধ্বগতি, কলেরা ও ডিপথেরিয়ায় মহামারির সমস্যায় জর্জরিত।জাতিসংঘের এপ্রিলের পরিসংখ্যানেই ইয়েমেনে অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২১ লাখ। ৫ বছরের নিচের ৪ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মোট নাগরিকের ৫৫ শতাংশই নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা বি ত। কলেরা সেখানে মহামারি আকারে হাজির হয় কিছুদিন আগে।২০১৫ সাল থেকেই হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেখানে বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেক বেসামরিক। বাস্তুহারা হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। আরোপিত অবরোধের কারণে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা নিয়মিত পৌঁছাতে পারে না। বেশি দামের কারণে ইয়েমেনিদের নিজেদের সহায় সম্বল বিক্রি করে খাবার কিনতে হচ্ছে। এতে করে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে বলে জানান স্টিফেন এন্ডারসন।